Europeanhistory
History
ফরাসি বিপ্লবের বিভিন্ন দিক: (French Revolution).
১. ফরাসি বিপ্লবের কারণগুলি কী ছিল?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের প্রধান কারণগুলি ছিল—[1] প্রবল স্বৈরাচারী ফরাসি রাজতন্ত্র জনগণের সমস্তরকম অধিকার হরণ করে ফ্রান্সকে রাজনৈতিক কারাগার’-এ পরিণত করে।
[2] ভুল অর্থনীতির জাদুঘর’ ফ্রান্সের তীব্র আর্থিক সংকট দেশবাসীকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়।
[3] ফ্রান্সের তীব্র বৈষম্যমূলক সমাজ কাঠামােয় মানুষ বিরক্ত হয়ে ওঠে। দার্শনিকরাও সমাজ ও রাষ্ট্রের ত্রুটিগুলি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তােলেন।
[2] ভুল অর্থনীতির জাদুঘর’ ফ্রান্সের তীব্র আর্থিক সংকট দেশবাসীকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়।
[3] ফ্রান্সের তীব্র বৈষম্যমূলক সমাজ কাঠামােয় মানুষ বিরক্ত হয়ে ওঠে। দার্শনিকরাও সমাজ ও রাষ্ট্রের ত্রুটিগুলি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তােলেন।
২. ফরাসি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ কী?
উঃ- ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই ও অভিজাত-প্রধান পার্লামেন্টের মধ্যে বিরােধ বাধলে রাজা পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন। ফলে অভিজাতরা বিদ্রোহ করে রাজাকে নতিস্বীকারে বাধ্য করে। অভিজাতদের বিদ্রোহের বিরুদ্ধেই ফরাসি জনগণ বিদ্রোহ শুরু করে।
৩. ‘এস্টেট' বলতে কী বােঝায়?
উঃ- বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজব্যবস্থায় তিনটি পৃথক সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। এক-একটি সম্প্রদায়কে ‘এস্টেট' বলা হত।
৪. ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে প্রচলিত প্রধান কয়েকটি করের নাম লেখাে।
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে প্রচলিত প্রধান কয়েকটি কর ছিল—
[1] টাইলে বা ভূমিকর।
[2] ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর।
[3] ভিটিংয়েমে বা আয়কর।
[4] গ্যাবেলা বা লবণ কর
[5] টাইদ বা ধর্মকর।
[6] করভি বা শ্রমকর (প্রভুর কাজে বাধ্যতামূলক বেগার শ্ৰমদান) প্রভৃতি।
৫. টাইদ’ ও করভি’ কোন ধরনের কর?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ‘টাইদ’ ছিল গির্জা কর্তৃক আদায়িকৃত ধর্মকর এবং করভি’ ছিল কৃষকের কাছ থেকে প্রভু কর্তৃক আদায়িকৃত বেগার শ্রম।
৬. বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ লেখ?
উঃ- [1] জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতির ওপর চাপ।
[2] ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি।
[3] খাদ্যশস্যের মূল্য অন্তত ৬০-৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি।
[4] শস্যহানির ফলে খাদ্যাভাব প্রভৃতি।
৭. ষােড়শ লুই তুর্গোকে কেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন?
উঃ- রাজা ষোড়শ লুইয়ের আমলে ফ্রান্সের যুদ্ধে অংশগ্রহণ, জাতীয় ঋণ ও তার সুদ পরিশােধ, রাজ পরিবারের বিলাসিতা, ভ্রান্ত করনীতি প্রভৃতি কারণে রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে যায়। এই আর্থিক সংকট থেকে রেহাই পেতে ষােড়শ লুই তুর্গোকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন।
৮. যােড়শ লুইয়ের চারজন অর্থমন্ত্রীর নাম লেখ?
উঃ- ষােড়শ লুইয়ের চারজন অর্থমন্ত্রী হলেন তুর্গো, নেকার, ক্যালােন এবং ব্রিয়া।
৯. ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ কী ?
উঃ- ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ হল বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে প্রচলিত একধরনের রাজকীয় গ্রেফতারি পরােয়ানা। এই পরােয়ানার মাধ্যমে যে-কোনাে ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখা যেত।
১০. প্রাক-বিপ্লব পর্বে ফ্রান্সের দুটি রাজকীয় পরােয়ানার উল্লেখ করো?
উঃ- প্রাক-বিপ্লব পর্বে ফ্রান্সের দুটি রাজকীয় পরােয়ানা ছিল—
লেতর দ্য কেশ ও লেতর দ্য গ্রেস:- এই পরােয়ানার দ্বারা অর্থের বিনিময়ে যে-কোনাে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান থেকে রেহাই দেওয়া হত।
১১. ইনটেনডেন্ট’ কাদের বলা হয়? এরা অর্থলােলুপ নেকড়ে’ নামে উপাধি পায় কেন?
উঃ-
[1] ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে প্রদেশের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাজকর্মে দায়িত্ব পালনকারী অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত একশ্রেণির কর্মচারী ছিল। তাদের ইনটেনডেন্ট বলা হত।
[2] বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে ইনটেনডেন্টরা জনগণের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করত বলে এরা ‘অর্থলােলুপ নেকড়ে’ নামে উপাধি পায়।
১২. ফ্রান্সকে রাজনৈতিক কারাগার’ বলা হয় কেন?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে ‘লেতর দ্য ক্যাশে' নামক এক ধরনের রাজকীয় গ্রেফতারি পরােয়ানা প্রচলিত ছিল। এর মাধ্যমে যেকোনাে ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাগারে অথবা বাস্তিল দুর্গে আটকে রাখা যেত। এই কারণেই দার্শনিক ভলতেয়ার ফ্রান্সকে রাজনৈতিক কারাগার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁকেও বন্দিরূপে বাস্তিল দুর্গে আটকে রাখা হয়েছিল।
১৩. ফরাসি রাজতন্ত্রের চরিত্র কেমন ছিল?
উঃ- ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল স্বৈরাচারী ও ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী। এই রাজতান্ত্রিক শাসনে রাজাই ছিলেন দেশের সর্বময় কর্তা। এতে জনগণের কোনাে ভূমিকা ছিল না।
১৪. স্টেটস জেনারেল কী?
উঃ- স্টেটস জেনারেল হল ফ্রান্সের জাতীয় প্রতিনিধি সভা। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাধারণ ফরাসিবাসীর সুবিধা-অসুবিধার কথা রাজার কাছে পৌঁছেত। বাস্তবে ফ্রান্সের এই ‘স্টেটস জেনারেল ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের আগে পর্যন্ত টানা ১৭৫ বছর বন্ধ ছিল।
১৫. কারা ‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি গঠন করেন?
উঃ- মিরাবাে, লাফায়েৎ, আবে সিয়েস প্রমুখ উদারপন্থী অভিজাতরা তৃতীয় সম্প্রদায়ে যােগ দিয়ে প্যাট্রিয়টিক পার্টি’ গঠন করেন।
১৬. ফরাসি.বুর্জোয়া শ্রেণি কটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল ও কী কী?
উঃ- বিপ্লবের আগে ফরাসি বুর্জোয়া সম্প্রদায় তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা—
[1] ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত উচ্চ বুর্জোয়া।
[2] আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত মধ্য বুর্জোয়া।
[3] দোকানদার, কারিগর, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত নিম্ন বুর্জোয়া।
১২. ফ্রান্সকে রাজনৈতিক কারাগার’ বলা হয় কেন?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে ‘লেতর দ্য ক্যাশে' নামক এক ধরনের রাজকীয় গ্রেফতারি পরােয়ানা প্রচলিত ছিল। এর মাধ্যমে যেকোনাে ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাগারে অথবা বাস্তিল দুর্গে আটকে রাখা যেত। এই কারণেই দার্শনিক ভলতেয়ার ফ্রান্সকে রাজনৈতিক কারাগার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁকেও বন্দিরূপে বাস্তিল দুর্গে আটকে রাখা হয়েছিল।
১৩. ফরাসি রাজতন্ত্রের চরিত্র কেমন ছিল?
উঃ- ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল স্বৈরাচারী ও ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী। এই রাজতান্ত্রিক শাসনে রাজাই ছিলেন দেশের সর্বময় কর্তা। এতে জনগণের কোনাে ভূমিকা ছিল না।
১৪. স্টেটস জেনারেল কী?
উঃ- স্টেটস জেনারেল হল ফ্রান্সের জাতীয় প্রতিনিধি সভা। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাধারণ ফরাসিবাসীর সুবিধা-অসুবিধার কথা রাজার কাছে পৌঁছেত। বাস্তবে ফ্রান্সের এই ‘স্টেটস জেনারেল ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের আগে পর্যন্ত টানা ১৭৫ বছর বন্ধ ছিল।
১৫. কারা ‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি গঠন করেন?
উঃ- মিরাবাে, লাফায়েৎ, আবে সিয়েস প্রমুখ উদারপন্থী অভিজাতরা তৃতীয় সম্প্রদায়ে যােগ দিয়ে প্যাট্রিয়টিক পার্টি’ গঠন করেন।
১৬. ফরাসি.বুর্জোয়া শ্রেণি কটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল ও কী কী?
উঃ- বিপ্লবের আগে ফরাসি বুর্জোয়া সম্প্রদায় তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা—
[1] ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত উচ্চ বুর্জোয়া।
[2] আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত মধ্য বুর্জোয়া।
[3] দোকানদার, কারিগর, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত নিম্ন বুর্জোয়া।
১৭. ফরাসি বিপ্লবের তিনজন দার্শনিকের নাম লেখ?
উঃ- মন্তেস্কু, ভলতেয়ার, রুশো।
১৮. ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে লবণ কর ও ধর্মকরের (চার্চকে দিতে হত) নাম কী ?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে লবণ করের নাম ছিল গ্যাবেল এবং ধর্মকরের নাম ছিল টাইদ।
১৯. ‘Wealth of Nations' গ্রন্থে অ্যাডাম স্মিথের বক্তব্য কী ছিল ?
উঃ- ‘Wealth of Nations' গ্রন্থে অ্যাডাম স্মিথের বক্তব্য ছিল সমাজের ন্যায়-অন্যায় বােধের সঙ্গে মিলিয়ে অর্থনীতিকে বিচার করতে হবে, অর্থশাস্ত্রকে বিশ্লেষণ করতে হবে জাতি ও রাষ্ট্র কাঠামাের ভিত্তিতে এবং উন্মুক্ত বাজার, শ্রমের বণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।
২০. কনট্রাক্ট অব পপাইসি' কী ?
উঃ- বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্সে যাজক সম্প্রদায়ের অধীনস্থ গির্জার কাছে দেশের » অংশ কৃষিজমি ছিল। এই জমির জন্য যাজকরা রাজাকে কোনাে বাধ্যতামূলক কর দিত না। তবে কনট্রাক্ট অব পােইসি নামে একটি চুক্তি অনুসারে যাজকরা রাজাকে স্বেচ্ছাকর দিত।
২১. ‘থার্ড এস্টেট' কী ?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের আগে শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যে তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল থার্ড এস্টেট (Third Estate) বা তৃতীয় সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল সব ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ধনী বুর্জোয়া, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক, সাঁকুলােৎ বা চালচুলােহীন ভবঘুরে প্রভৃতি।
২২. ফরাসি বুর্জোয়া শ্রেণি সম্পর্কে কী জান?
উঃ- ফ্রান্সের বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার তৃতীয় শ্রেণির অন্যতম অংশ ছিল বুর্জোয়া শ্রেণি। বুর্জোয়ারা ছিল বিপ্লবের অগ্রদূত। এরা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল—
[1] ধনী ব্যবসায়ী, ব্যাংক মালিক, শিল্পপতি প্রমুখ ছিল উচ্চ বুর্জোয়া।
[2] শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রমুখ ছিল মধ্য বুর্জোয়া।
[3] সাধারণ দোকানদার, কৃষক, শ্রমিক প্রমুখ ছিল নিম্ন বুর্জোয়া।
২৩. ফরাসি সমাজে অভিজাতরা কী ধরনের সুযােগসুবিধা ভােগ করত?
উঃ- ফরাসি সমাজে অভিজাতরা বিভিন্ন সুযােগসুবিধা ভােগ করত, যথা—
[1] দেশের ৯৫% অংশ কৃষিজমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারকে কোনাে নিয়মিত কর দিত না।
[2] বিচারবিভাগ, প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি চাকরিতে এই সম্প্রদায়ের একচেটিয়া দখলদারি ছিল।
২৪. ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহ কেন সংঘটিত হয়েছিল?
উঃ- ফরাসি রাজা ষােড়শ লুইএর অর্থমন্ত্রী ব্রিয়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের । সঙ্গে অভিজাতদের ওপরও কর আরােপের প্রস্তাব দিলে ক্ষুধ অভিজাতরা দাবি করে যে, কর আরােপের অধিকার রয়েছে একমাত্র স্টেটস জেনারেলের। এই অবস্থায় পার্লামেন্টে কিছু অপ্রীতিকর অবস্থা ও অভিজাতদের বিক্ষোভের ফলে রাজা পার্লামেন্ট মুলতুবি করে দেন। এর ফলে অভিজাতরা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়।
২৫. ফরাসি বিপ্লবের সময় মধ্য বুর্জোয়া বলতে কাদের বােঝায়?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের সময় মধ্য বুর্জোয়া বলতে বােঝাত আইনজীবী, চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের। এরা আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিল। কিন্তু বংশ কৌলিন্য না থাকায় এরা সমাজের সবরকম সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হত।
২৬. ফরাসি সমাজে অধিকারপ্রাপ্ত ও অধিকারহীন সম্প্রদায় কারা ছিল? তাদের জনসংখ্যার হার কেমন ছিল?
উঃ- ফরাসি সমাজে অধিকারপ্রাপ্ত সম্প্রদায় ছিল যাজক অর্থাৎ, প্রথম সম্প্রদায় এবং অভিজাত অর্থাৎ, দ্বিতীয় সম্প্রদায়। যাজক ও অভিজাতদের জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।
তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া, ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক, কৃষক, শ্রমিক, সর্বহারা অর্থাৎ, সাঁকুলােৎ প্রমুখ ছিল অধিকারহীন শ্রেণি। এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ শতাংশ।
২৭. বিপ্লবের আগে কয়েকজন উল্লেখযােগ্য ফরাসি দার্শনিকের নাম লেখাে?
উঃ- বিপ্লবের আগে কয়েকজন উল্লেখযােগ্য ফরাসি দার্শনিক ছিলেন—
[1] মন্তেস্কু(১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.)।
[2] ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮ খ্রি.)।
[3] জঁ জ্যাক রুশাে (১৭১২-১৭৭৮ খ্রি.) প্রভৃতি।
২৮. ‘মন্তেস্ক' কে ছিলেন?
উঃ- মন্তেস্ক (১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.) ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালের একজন বিখ্যাত দার্শনিক। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার ধারণার বিরােধী।
২৯. মন্তেস্কুর লেখা একটি গ্রন্থের নাম লেখাে। এই গ্রন্থের মূল বক্তব্য কী ছিল?
উঃ-
মন্তেস্কুর লেখা একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল দি স্পিরিট অব লজ'।
‘দি স্পিরিট অব লজ’, গ্রন্থে—
[i] রাজার ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার তীব্র সমালােচনা করা হয়েছে।
[ii] নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
[iii] ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ ঘটিয়ে রাষ্ট্রের শাসন, আইন ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ পৃথক করার কথা বলা হয়েছে।
৩০. রুশাে কে ছিলেন? তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কী ?
উঃ- রুশাে (১৭১২-১৭৭৮ খ্রি.) ছিলেন অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সের সর্বাধিক জনপ্রিয় দার্শনিক। রুশাের লেখা সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ হল ‘সােশ্যাল কনট্রাক্ট' বা সামাজিক চুক্তি'। এটি বিপ্লবের বাইবেল নামে পরিচিত।
৩১. 'সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থে রুশাের মূল বক্তব্য কী ছিল?
উঃ- সামাজিক চুক্তি’গ্রন্থের মূল বক্তব্য হল—
[1] প্রতিটি মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জন্মের পর সমাজ তাকে শৃঙ্খলিত করে।
[2] একদা জনগণের ইচ্ছা’ (General Will') অনুসারে এক চুক্তির মাধ্যমে রাজার হাতে শাসনক্ষমতা প্রদান করা হয়। তাই ঈশ্বর নয়, জনগণই হল রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির মূল উৎস।
[3] জনগণ ইচ্ছা করলে রাজাকে পদচ্যুত করতে পারবে।
৩২. ডেনিস দিদেরাে ও ডিএলেমবার্ট সম্পর্কে কী জান?
উঃ- ডেনিস দিদেরাে ও ডি' এলেমবার্ট ছিলেন দুজন ফরাসি দার্শনিক। ব্রাসি বিপ্লবের আগে তাদের প্রচেষ্টায় ৩৫টি খণ্ডে বিশ্বকোশ'এর সংকলন প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থগুলিতে প্রাক্-বিপ্লবীযুগের ফ্রান্সের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, দার্শনিকদের রচনা প্রভৃতি স্থান লাভ করে।
৩৩. ‘ফিজিওক্র্যাটিকাদের বলা হত?
উঃ- অ্যাডাম স্মিথের অনুগামী একশ্রেণির প্রার্থনীতিবিদদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই তথনীতিবিদগণ শিল্প বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরােধিতা করেন এবং অবাধ বাণিজ্য ও বেসরকারি শিল্প স্থাপনের দাবি জানান। এরাই ‘ফিজিওক্র্যাট' নামে পরিচিত।
৩৪. ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে ও বিপক্ষে মতদানকারী কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখাে?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে মত দিয়েছেন টেহন, রুস্তান, রাইকার, সেতােব্রিয়া, মাদেলা, জোরেস, মাতিয়ে, লাব্রজ, মর্নে প্রমুখ ঐতিহাসিক।
অন্যদিকে, ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি লেফেভর, মনিয়র, মর্স স্টিফেন্স, ম্যালে দ্য পান প্রমুখ ঐতিহাসিক।
৩৫. রুশাের ‘প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ধারণাটির ব্যাখ্যা করাে।
উঃ- ফ্রান্সের সর্বাধিক জনপ্রিয় দার্শনিক তথা ফরাসি বিপ্লবের জনক রুশাে মনে করতেন রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি নন, রাজপদ সৃষ্টি হয় চুক্তির মাধ্যমে। দেশের সাধারণ জনগণই হল ক্ষমতার প্রকৃত উৎস এবং শক্তির অধিকারী। তার এই ধারণাই ইতিহাসে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র নামে পরিচিত।
৩৬. 'Assembly of Notables' কি ?
উঃ- Assembly of Notables' হল বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে উচ্চস্তরের অভিজাত, যাজক ও গণ্যমান্যদের নিয়ে গঠিত একটি সভা। এই সভার সদস্যরা রাজার দ্বারা মনােনীত হতেন। ফরাসি রাজা বিশেষ প্রয়ােজন হলে কোনাে কোনাে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে এই সভার সঙ্গে আলােচনা করতেন।
৩৭. প্রাকৃবিপ্লব যুগে ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অবস্থান কেমন ছিল?
উঃ- প্রাক-বিপ্লব যুগে ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা অনেকে শিক্ষিত এবং আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল হলেও তারা যাজক ও অভিজাতদের মতাে মর্যাদা ও সুযােগসুবিধা পেত না।
৩৮. বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে বুর্জোয়াসি’ বলতে কাদের বােঝাত?
উঃ- বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে বুর্জোয়াসি’ বলতে তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বােঝায়। এদের মধ্যে ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাঙ্কার প্রমুখ উচ্চ বুর্জোয়া, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক প্রমুখ মধ্য বুর্জোয়া এবং কারিগর, দোকানদার, কৃষক, শ্রমিক প্রমুখ নিম্ন বুর্জোয়া নামে পরিচিত ছিল।
৩৯. 'বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলতে কী বােঝ?
উঃ- বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্সে মার্কেন্টাইল মতবাদের বিরােধী বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে ‘টেনিস কোর্টের শপথ’-এর ঘটনার পর ভীত ও হতাশাগ্রস্থ রাজা যযাড়শ লুই তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি অনুযায়ী তিন সম্প্রদায়ের মাথাপিছু ভােট ও একত্রে অধিবেশন ডাকার দাবি মেনে নেন। তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে এই বিপ্লব বুর্জোয়া বিপ্লব' নামে পরিচিত।
৪০. বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের জাতীয় সভায় ভােটাধিকার কেমন ছিল?
উঃ- বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে জাতীয় সভা ও স্টেটস জেনারেলের নির্বাচিত ১২১৪ জন সদস্যের মধ্যে যাজকদের ৩০৮ জন, অভিজাতদের ২৮৫ জন এবং তৃতীয় শ্রেণির ৬২১ জন সদস্য ছিল। কিন্তু প্রতিটি সম্প্রদায়ের ১টি করে মােট ৩টি ভােট দেওয়ার নিয়ম ছিল।
৪১. টেনিস কোর্টেরশপথের তাৎপর্য কী?
উঃ- টেনিস কোর্টের শপথের তাৎপর্য হল—
[1] এর ফলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবিগুলি ফরাসি রাজা মেনে নিতে বাধ্য হন।
[2] টেনিসের কোটের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বুর্জোয়া বিপ্লবের প্রথম পর্ব সফল হয়।
৪২. টেনিস কোর্টের শপথের পর যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের কতজন সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যােগ দেয়?
উঃ- টেনিস কোর্টের শপথের পর যাজক সম্প্রদায়ের ১৩৯ জন (কোবানের মতে ১৭০ জন) এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের ৪৭ জন (কোবানের মতে ৫০ জন) সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যােগ দেয়।
৪৩. ‘লেতর দ্য গ্রেস’ কী?
উঃ- ‘লেতর দ্য গ্রেস’ হল বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে প্রচলিত এক ধরনের রাজকীয় গ্রেফতারি পরােয়ানা। এই পরােয়ানার মাধ্যমে যে কোনাে ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখা যেত।
৪৪. বিলাসিতাপ্রিয় তিন ফরাসি রাজার নাম করাে?
উঃ- বিলাসিতাপ্রিয় তিন ফরাসি রাজা হলেন চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই এবং ষােড়শ লুই।
৪৫. ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ করেছি কেন?
উঃ- ফরাসি রাজা যােড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশি পার্লামেন্ট মুলতুবি করে সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কর আদায়ে উদ্যোগ নিলে ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ করেছি
৪৬. সাধারণের ইচ্ছা’ (General will) বলতে কী বােঝ?
উঃ- সাধারণের ইচ্ছা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি ধারণা যা করা দার্শনিক রুশাে তার সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এই ত তিনি বলেছেন যে, সমষ্টিগত জনগণ সাধারণ ইচ্ছায়’ অর্থাৎ নিজেদে ইচ্ছায় এবং চুক্তির মাধ্যমে প্রাচীনকালে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। তা একমাত্র সাধারণ ইচ্ছা’ই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
৪৭. দুজন বিশ্বকোশ রচয়িতার নাম লেখাে?
উঃ- দুজন বিশ্বকোশ রচয়িতা হলেন ডেনিস দিদেরা এবং ডি এলেমবার্ট।
৪৮. ভলতেয়ারের লেতর ফিলজফিক গ্রন্থের গুরুত্ব কী?
উঃ- ১৭৩৪ সালে প্রকাশিত ভলতেয়ারের লেতর ফিলজফিক গ্রন্থে প্রধান গুরুত্বগুলি হল—এই গ্রন্থে তিনি
[1] ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুণে প্রতিবাদ করেন।
১৮. ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে লবণ কর ও ধর্মকরের (চার্চকে দিতে হত) নাম কী ?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে লবণ করের নাম ছিল গ্যাবেল এবং ধর্মকরের নাম ছিল টাইদ।
১৯. ‘Wealth of Nations' গ্রন্থে অ্যাডাম স্মিথের বক্তব্য কী ছিল ?
উঃ- ‘Wealth of Nations' গ্রন্থে অ্যাডাম স্মিথের বক্তব্য ছিল সমাজের ন্যায়-অন্যায় বােধের সঙ্গে মিলিয়ে অর্থনীতিকে বিচার করতে হবে, অর্থশাস্ত্রকে বিশ্লেষণ করতে হবে জাতি ও রাষ্ট্র কাঠামাের ভিত্তিতে এবং উন্মুক্ত বাজার, শ্রমের বণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।
২০. কনট্রাক্ট অব পপাইসি' কী ?
উঃ- বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্সে যাজক সম্প্রদায়ের অধীনস্থ গির্জার কাছে দেশের » অংশ কৃষিজমি ছিল। এই জমির জন্য যাজকরা রাজাকে কোনাে বাধ্যতামূলক কর দিত না। তবে কনট্রাক্ট অব পােইসি নামে একটি চুক্তি অনুসারে যাজকরা রাজাকে স্বেচ্ছাকর দিত।
২১. ‘থার্ড এস্টেট' কী ?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের আগে শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যে তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল থার্ড এস্টেট (Third Estate) বা তৃতীয় সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল সব ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ধনী বুর্জোয়া, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক, সাঁকুলােৎ বা চালচুলােহীন ভবঘুরে প্রভৃতি।
২২. ফরাসি বুর্জোয়া শ্রেণি সম্পর্কে কী জান?
উঃ- ফ্রান্সের বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার তৃতীয় শ্রেণির অন্যতম অংশ ছিল বুর্জোয়া শ্রেণি। বুর্জোয়ারা ছিল বিপ্লবের অগ্রদূত। এরা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল—
[1] ধনী ব্যবসায়ী, ব্যাংক মালিক, শিল্পপতি প্রমুখ ছিল উচ্চ বুর্জোয়া।
[2] শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রমুখ ছিল মধ্য বুর্জোয়া।
[3] সাধারণ দোকানদার, কৃষক, শ্রমিক প্রমুখ ছিল নিম্ন বুর্জোয়া।
২৩. ফরাসি সমাজে অভিজাতরা কী ধরনের সুযােগসুবিধা ভােগ করত?
উঃ- ফরাসি সমাজে অভিজাতরা বিভিন্ন সুযােগসুবিধা ভােগ করত, যথা—
[1] দেশের ৯৫% অংশ কৃষিজমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারকে কোনাে নিয়মিত কর দিত না।
[2] বিচারবিভাগ, প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি চাকরিতে এই সম্প্রদায়ের একচেটিয়া দখলদারি ছিল।
২৪. ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহ কেন সংঘটিত হয়েছিল?
উঃ- ফরাসি রাজা ষােড়শ লুইএর অর্থমন্ত্রী ব্রিয়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের । সঙ্গে অভিজাতদের ওপরও কর আরােপের প্রস্তাব দিলে ক্ষুধ অভিজাতরা দাবি করে যে, কর আরােপের অধিকার রয়েছে একমাত্র স্টেটস জেনারেলের। এই অবস্থায় পার্লামেন্টে কিছু অপ্রীতিকর অবস্থা ও অভিজাতদের বিক্ষোভের ফলে রাজা পার্লামেন্ট মুলতুবি করে দেন। এর ফলে অভিজাতরা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়।
২৫. ফরাসি বিপ্লবের সময় মধ্য বুর্জোয়া বলতে কাদের বােঝায়?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের সময় মধ্য বুর্জোয়া বলতে বােঝাত আইনজীবী, চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের। এরা আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিল। কিন্তু বংশ কৌলিন্য না থাকায় এরা সমাজের সবরকম সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হত।
২৬. ফরাসি সমাজে অধিকারপ্রাপ্ত ও অধিকারহীন সম্প্রদায় কারা ছিল? তাদের জনসংখ্যার হার কেমন ছিল?
উঃ- ফরাসি সমাজে অধিকারপ্রাপ্ত সম্প্রদায় ছিল যাজক অর্থাৎ, প্রথম সম্প্রদায় এবং অভিজাত অর্থাৎ, দ্বিতীয় সম্প্রদায়। যাজক ও অভিজাতদের জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।
তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া, ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক, কৃষক, শ্রমিক, সর্বহারা অর্থাৎ, সাঁকুলােৎ প্রমুখ ছিল অধিকারহীন শ্রেণি। এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ শতাংশ।
২৭. বিপ্লবের আগে কয়েকজন উল্লেখযােগ্য ফরাসি দার্শনিকের নাম লেখাে?
উঃ- বিপ্লবের আগে কয়েকজন উল্লেখযােগ্য ফরাসি দার্শনিক ছিলেন—
[1] মন্তেস্কু(১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.)।
[2] ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮ খ্রি.)।
[3] জঁ জ্যাক রুশাে (১৭১২-১৭৭৮ খ্রি.) প্রভৃতি।
২৮. ‘মন্তেস্ক' কে ছিলেন?
উঃ- মন্তেস্ক (১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.) ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালের একজন বিখ্যাত দার্শনিক। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার ধারণার বিরােধী।
২৯. মন্তেস্কুর লেখা একটি গ্রন্থের নাম লেখাে। এই গ্রন্থের মূল বক্তব্য কী ছিল?
উঃ-
মন্তেস্কুর লেখা একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল দি স্পিরিট অব লজ'।
‘দি স্পিরিট অব লজ’, গ্রন্থে—
[i] রাজার ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার তীব্র সমালােচনা করা হয়েছে।
[ii] নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
[iii] ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়ােগ ঘটিয়ে রাষ্ট্রের শাসন, আইন ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ পৃথক করার কথা বলা হয়েছে।
৩০. রুশাে কে ছিলেন? তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কী ?
উঃ- রুশাে (১৭১২-১৭৭৮ খ্রি.) ছিলেন অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সের সর্বাধিক জনপ্রিয় দার্শনিক। রুশাের লেখা সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ হল ‘সােশ্যাল কনট্রাক্ট' বা সামাজিক চুক্তি'। এটি বিপ্লবের বাইবেল নামে পরিচিত।
৩১. 'সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থে রুশাের মূল বক্তব্য কী ছিল?
উঃ- সামাজিক চুক্তি’গ্রন্থের মূল বক্তব্য হল—
[1] প্রতিটি মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জন্মের পর সমাজ তাকে শৃঙ্খলিত করে।
[2] একদা জনগণের ইচ্ছা’ (General Will') অনুসারে এক চুক্তির মাধ্যমে রাজার হাতে শাসনক্ষমতা প্রদান করা হয়। তাই ঈশ্বর নয়, জনগণই হল রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির মূল উৎস।
[3] জনগণ ইচ্ছা করলে রাজাকে পদচ্যুত করতে পারবে।
৩২. ডেনিস দিদেরাে ও ডিএলেমবার্ট সম্পর্কে কী জান?
উঃ- ডেনিস দিদেরাে ও ডি' এলেমবার্ট ছিলেন দুজন ফরাসি দার্শনিক। ব্রাসি বিপ্লবের আগে তাদের প্রচেষ্টায় ৩৫টি খণ্ডে বিশ্বকোশ'এর সংকলন প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থগুলিতে প্রাক্-বিপ্লবীযুগের ফ্রান্সের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, দার্শনিকদের রচনা প্রভৃতি স্থান লাভ করে।
৩৩. ‘ফিজিওক্র্যাটিকাদের বলা হত?
উঃ- অ্যাডাম স্মিথের অনুগামী একশ্রেণির প্রার্থনীতিবিদদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই তথনীতিবিদগণ শিল্প বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরােধিতা করেন এবং অবাধ বাণিজ্য ও বেসরকারি শিল্প স্থাপনের দাবি জানান। এরাই ‘ফিজিওক্র্যাট' নামে পরিচিত।
৩৪. ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে ও বিপক্ষে মতদানকারী কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখাে?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে মত দিয়েছেন টেহন, রুস্তান, রাইকার, সেতােব্রিয়া, মাদেলা, জোরেস, মাতিয়ে, লাব্রজ, মর্নে প্রমুখ ঐতিহাসিক।
অন্যদিকে, ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি লেফেভর, মনিয়র, মর্স স্টিফেন্স, ম্যালে দ্য পান প্রমুখ ঐতিহাসিক।
৩৫. রুশাের ‘প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ধারণাটির ব্যাখ্যা করাে।
উঃ- ফ্রান্সের সর্বাধিক জনপ্রিয় দার্শনিক তথা ফরাসি বিপ্লবের জনক রুশাে মনে করতেন রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি নন, রাজপদ সৃষ্টি হয় চুক্তির মাধ্যমে। দেশের সাধারণ জনগণই হল ক্ষমতার প্রকৃত উৎস এবং শক্তির অধিকারী। তার এই ধারণাই ইতিহাসে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র নামে পরিচিত।
৩৬. 'Assembly of Notables' কি ?
উঃ- Assembly of Notables' হল বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে উচ্চস্তরের অভিজাত, যাজক ও গণ্যমান্যদের নিয়ে গঠিত একটি সভা। এই সভার সদস্যরা রাজার দ্বারা মনােনীত হতেন। ফরাসি রাজা বিশেষ প্রয়ােজন হলে কোনাে কোনাে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে এই সভার সঙ্গে আলােচনা করতেন।
৩৭. প্রাকৃবিপ্লব যুগে ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অবস্থান কেমন ছিল?
উঃ- প্রাক-বিপ্লব যুগে ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা অনেকে শিক্ষিত এবং আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল হলেও তারা যাজক ও অভিজাতদের মতাে মর্যাদা ও সুযােগসুবিধা পেত না।
৩৮. বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে বুর্জোয়াসি’ বলতে কাদের বােঝাত?
উঃ- বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সে বুর্জোয়াসি’ বলতে তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বােঝায়। এদের মধ্যে ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাঙ্কার প্রমুখ উচ্চ বুর্জোয়া, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক প্রমুখ মধ্য বুর্জোয়া এবং কারিগর, দোকানদার, কৃষক, শ্রমিক প্রমুখ নিম্ন বুর্জোয়া নামে পরিচিত ছিল।
৩৯. 'বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলতে কী বােঝ?
উঃ- বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্সে মার্কেন্টাইল মতবাদের বিরােধী বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে ‘টেনিস কোর্টের শপথ’-এর ঘটনার পর ভীত ও হতাশাগ্রস্থ রাজা যযাড়শ লুই তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি অনুযায়ী তিন সম্প্রদায়ের মাথাপিছু ভােট ও একত্রে অধিবেশন ডাকার দাবি মেনে নেন। তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে এই বিপ্লব বুর্জোয়া বিপ্লব' নামে পরিচিত।
৪০. বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের জাতীয় সভায় ভােটাধিকার কেমন ছিল?
উঃ- বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে জাতীয় সভা ও স্টেটস জেনারেলের নির্বাচিত ১২১৪ জন সদস্যের মধ্যে যাজকদের ৩০৮ জন, অভিজাতদের ২৮৫ জন এবং তৃতীয় শ্রেণির ৬২১ জন সদস্য ছিল। কিন্তু প্রতিটি সম্প্রদায়ের ১টি করে মােট ৩টি ভােট দেওয়ার নিয়ম ছিল।
৪১. টেনিস কোর্টেরশপথের তাৎপর্য কী?
উঃ- টেনিস কোর্টের শপথের তাৎপর্য হল—
[1] এর ফলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবিগুলি ফরাসি রাজা মেনে নিতে বাধ্য হন।
[2] টেনিসের কোটের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বুর্জোয়া বিপ্লবের প্রথম পর্ব সফল হয়।
৪২. টেনিস কোর্টের শপথের পর যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের কতজন সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যােগ দেয়?
উঃ- টেনিস কোর্টের শপথের পর যাজক সম্প্রদায়ের ১৩৯ জন (কোবানের মতে ১৭০ জন) এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের ৪৭ জন (কোবানের মতে ৫০ জন) সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যােগ দেয়।
৪৩. ‘লেতর দ্য গ্রেস’ কী?
উঃ- ‘লেতর দ্য গ্রেস’ হল বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে প্রচলিত এক ধরনের রাজকীয় গ্রেফতারি পরােয়ানা। এই পরােয়ানার মাধ্যমে যে কোনাে ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখা যেত।
৪৪. বিলাসিতাপ্রিয় তিন ফরাসি রাজার নাম করাে?
উঃ- বিলাসিতাপ্রিয় তিন ফরাসি রাজা হলেন চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই এবং ষােড়শ লুই।
৪৫. ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ করেছি কেন?
উঃ- ফরাসি রাজা যােড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশি পার্লামেন্ট মুলতুবি করে সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কর আদায়ে উদ্যোগ নিলে ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ করেছি
৪৬. সাধারণের ইচ্ছা’ (General will) বলতে কী বােঝ?
উঃ- সাধারণের ইচ্ছা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি ধারণা যা করা দার্শনিক রুশাে তার সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এই ত তিনি বলেছেন যে, সমষ্টিগত জনগণ সাধারণ ইচ্ছায়’ অর্থাৎ নিজেদে ইচ্ছায় এবং চুক্তির মাধ্যমে প্রাচীনকালে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। তা একমাত্র সাধারণ ইচ্ছা’ই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
৪৭. দুজন বিশ্বকোশ রচয়িতার নাম লেখাে?
উঃ- দুজন বিশ্বকোশ রচয়িতা হলেন ডেনিস দিদেরা এবং ডি এলেমবার্ট।
৪৮. ভলতেয়ারের লেতর ফিলজফিক গ্রন্থের গুরুত্ব কী?
উঃ- ১৭৩৪ সালে প্রকাশিত ভলতেয়ারের লেতর ফিলজফিক গ্রন্থে প্রধান গুরুত্বগুলি হল—এই গ্রন্থে তিনি
[1] ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুণে প্রতিবাদ করেন।
[2] সমকালীন ফ্রান্সের গির্জার দুর্নীতি, সামাজি বৈষম্য ও অবিচারের বিরােধিতা করেন।
[3] সকলের উনে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্থান দেন।
[3] সকলের উনে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্থান দেন।
[4] চরম স্বৈরাচারের পরিবর্তে জ্ঞানদী স্বৈরাচারের পক্ষ অবলম্বন করেন।
৪৯. ফিজিওক্র্যাট গােষ্ঠীর মূল বক্তব্য কী ছিল?
উঃ- ফিজিওক্র্যাট গােষ্ঠীর মূল বক্তব্য ছিল—
৪৯. ফিজিওক্র্যাট গােষ্ঠীর মূল বক্তব্য কী ছিল?
উঃ- ফিজিওক্র্যাট গােষ্ঠীর মূল বক্তব্য ছিল—
[1] শিল্প বাণিজ্যকে রাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে বেসরকারি শিল্প স্থাপন করতে হবে।
[2] অবা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে।
[3] ভূমিই যেহেতু সম্পদের উৎস, তা প্রত্যেক ভূমির মালিককেই কর দিতে হবে।
৫০. ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ও রানি কে ছিলেন? তারা কোন রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ও রানি ছিলেন যথাক্রমে ষােড়শ লুই এবং মারি আঁতােয়ানে। ষােড়শ লুই ও মারি আঁতােয়াতে বুরবো রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন।
৫১. দ্বিতীয় লিওপােল্ড কে ছিলেন?
উঃ- দ্বিতীয় লিওপােল্ড ছিলেন অস্ট্রিয়ার শাসক এবং ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুইএর পত্নী মারি আঁতােয়ানেতের ভাই। বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সের রাজপরিবার জনরােষে প্রবল আতঙ্কে দিন কাটালে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রীরা দ্বিতীয় লিওপােল্ডের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেন লিওপােল্ড সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ফরাসি রাজপরিবারকে সহায়ত দানের উদ্যোগ নেন।
৫২. মারি আঁতােয়ানেত ও টুৰ্গেন কে ছিলেন?
উঃ- মারি আঁতােয়ানেত ছিলেন ফরাসি সম্রাট সােড়শ লুই-এর পত্নী ষােড়শ লুই তার দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন। আঁতােয়ানেত ছিলে অত্যন্ত ক্ষমতালােভী। তিনি ফ্রান্সের বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত সম্প্রদায়কে সমর্থন করে অধিকারহীন সম্প্রদায়ের ওপর শােষণ বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
টুগেন ছিলেন ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুইয়ের অর্থমন্ত্রী।
[2] অবা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে।
[3] ভূমিই যেহেতু সম্পদের উৎস, তা প্রত্যেক ভূমির মালিককেই কর দিতে হবে।
৫০. ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ও রানি কে ছিলেন? তারা কোন রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ও রানি ছিলেন যথাক্রমে ষােড়শ লুই এবং মারি আঁতােয়ানে। ষােড়শ লুই ও মারি আঁতােয়াতে বুরবো রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন।
৫১. দ্বিতীয় লিওপােল্ড কে ছিলেন?
উঃ- দ্বিতীয় লিওপােল্ড ছিলেন অস্ট্রিয়ার শাসক এবং ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুইএর পত্নী মারি আঁতােয়ানেতের ভাই। বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সের রাজপরিবার জনরােষে প্রবল আতঙ্কে দিন কাটালে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রীরা দ্বিতীয় লিওপােল্ডের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেন লিওপােল্ড সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ফরাসি রাজপরিবারকে সহায়ত দানের উদ্যোগ নেন।
৫২. মারি আঁতােয়ানেত ও টুৰ্গেন কে ছিলেন?
উঃ- মারি আঁতােয়ানেত ছিলেন ফরাসি সম্রাট সােড়শ লুই-এর পত্নী ষােড়শ লুই তার দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন। আঁতােয়ানেত ছিলে অত্যন্ত ক্ষমতালােভী। তিনি ফ্রান্সের বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত সম্প্রদায়কে সমর্থন করে অধিকারহীন সম্প্রদায়ের ওপর শােষণ বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
টুগেন ছিলেন ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুইয়ের অর্থমন্ত্রী।
৫৩. ‘কেহিয়ার্স' কী?
উঃ- ফরাসি রাজা ষােড়শ লুই জাতীয় সভার অধিবেশন ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে সকল শ্রেণির প্রজাদের কাছ থেকে জাতীয় সভা সম্পর্কে তাদের মতামত ও অভিযােগ জানাতে বলেন। জনগণের এই অভিযােগের তালিকাকে ‘কেহিয়ার্স' বলা হত।
৫৪. ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের পার্লামেন্টের সঙ্গে ফরাসি রাজার দ্বন্দ্বের কারণ কী?
উঃ- প্যারিসের পার্লামেন্টের কিছু সদস্য উঙ্খল আচরণ করলে ক্ষুধ রাজা নিজের ভাই ডিউক অব অর্লিয়েন্সসহ পার্লামেন্টের দুজন সদস্যকে নির্বাসিত করেন। এরপর রাজার বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট কয়েকটি আইন পাস করলে রাজা সবকটি প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন। এর বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ শুরু করে।
৫৫. বাস্তিল দুর্গ সম্পর্কে কী জান?
উঃ- বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি স্বৈরশাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে প্রচুর মানুষকে বন্দি করে রাখা হত। প্যারিসের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এবং কারারক্ষীদের হত্যা করে এই কুখ্যাত দুর্গ দখল করে নেয়।
৫৬. বাস্তিল দুর্গ পতনের গুরুত্ব কী?
উঃ- বাস্তিল দুর্গের পতনের প্রধান গুরুত্ব ছিল—[1] এই দুর্গ থেকে নিরপরাধ বন্দিরা মুক্তি পায়। [2] রাজার স্বৈরশাসনের প্রতীক ধ্বংস হয়।
[3] বাস্তিলের পতনের মাধ্যমে বিপ্লবের জয়যাত্রা সূচিত হয়।
৫৭. ‘প্যারি কমিউন' কাকে বলে?
উঃ- বাস্তিল দুর্গের পতনের (১৪ জুলাই, ১৭৮৯ খ্রি.) পর বিপ্লবী জনতা প্যারিস শহরের পৌরশাসন পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে। এটি প্যারি কমিউন নামে পরিচিত।
৫৮. পৌর বিপ্লব কী?
উঃ- বাস্তিল দুর্গের পতনের পর বুর্জোয়ারা প্যারিসের দখল নিয়ে প্যারি কমিউন গঠন করে এখানকার পৌরশাসন পরিচালনা করতে থাকে। ফলে নতুন কমিউন' বা পৌরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঘটনা ‘পৌর বিপ্লব' নামে পরিচিত।
৫৯. ফরাসি বিপ্লবকে 'বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলা হত কেন?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ব্রাসি বিপ্লবকে নেতৃত্ব দিয়েছিল তৃতীয় এস্টেট বা তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বুর্জোয়ারা এবং বিপ্লবের পর ফ্রান্সে তাদেরই আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই বিপ্লবকে বুর্জোয় বিপ্লব' বলাে
৬০. ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিল অব রাইটস’-এর ধারাগুলি লেখাে।
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিল অব রাইটস'-এর ধারাগুলি হল—
[1] বার স্বাধীনতা।
[2]সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
[3] ধর্মবিশ্বারে স্বাধীনতা।
[4] সম্পত্তির উত্তরাধিকার।
৬১. কীভাবে বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে?
উঃ- জাতীয় সভার বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের চাপে ব্রাসি রাজা তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশনে বসা এবং মাথাপিছু ভােটের দাবি মেনে নিলে প্যারিসের জনতা অত্যন্ত উল্লসিত হয়। এরপর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই উত্তেজিত জনতা রক্ষীদের হত্যা করে কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ দখল করে নেয়।
৬২. জাতীয় সভায় বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের প্রধান দাবি কী ছিল?
উঃ- জাতীয় সভায় বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের প্রধান দাবি ছিল তিনটি সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশনে বসা এবং প্রতিটি সম্প্রদায়কে মাথাপিছু ভােটাধিকার প্রদান।
৬৩. রাজতন্ত্রের শবযাত্রা’ বলতে কী বােঝানাে হয়?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ অক্টোবর একদল মহিলা খাদ্যের দাবিতে ভার্সাই নগরীতে উপস্থিত হয়ে রাজপরিবারকে প্যারিসে আসতে বাধ্য করে। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক রাইকার রাজতন্ত্রের শব্যাত্রা বলে অভিহিত করেছেন।
৬৪. ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তারা স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়। পাওলি লিওন, ডিঅর্জন্ট, মাদাম রােনাল্ড প্রমুখ নারীদের নেতৃত্বে বিপ্লবকালীন বিভিন্ন দাঙ্গহাঙ্গামায় তারা নির্ভয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।
৬৫. ফরাসি বিপ্লবে গ্রামের মানুষ কীভাবে অংশগ্রহণ করে?
উঃ- বিপ্লবের আগের বছর ফ্রান্সের কৃষকরা শস্যহানির শিকার হলেও সামন্ততান্ত্রিক করের বােঝা থেকে তারা রেহাই পায়নি। কৃষকে সহজলভ্য খাদ্য রুটির দাম অত্যন্ত বেড়ে গেলে গ্রামে বুটির সংকট দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের মানুষ দলে দলে শহরে চলে আসে এবং বিপ্লবে অংশ নেয়।
৬৬. ব্রান্সউইক ঘােষণা’ কী?
উঃ- ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে আগস্টে প্রাশিয়ার সেনাপ্রধান ব্রান্সউইক এক ঘােষণার মাধ্যমে সিদের সতর্ক করে দেন যে, ফাসি রাজপরিবারে কোনাে ক্ষতি হলে তিনি প্যারিস শহর ধ্বংস করে দেবেন। এটি ‘ব্রান্সউইক ঘােষণা' নামে পরিচিত।
৬৭. 'পিলনিৎজের ঘােষণা' কী?
উঃ- অস্ট্রিয়ার রাজা লিওপােল্ড এবং প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিখ উইলিয়াম ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট পিলনিজ নামক স্থান থেকে যৌথভাবে এক ঘােষণাপত্রের দ্বারা ফরাসি রাজতন্ত্রের সপক্ষে ইউরােপের রাজন্যবর্গকে সশস্ত্র হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। এটি পিলনিৎজের ঘােষণা’ নামে পরিচিত।
৬৮. কারা ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটায়?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয় মহাসভা বা ন্যাশনাল কনভেনশন ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটায়।
৬৯. মুহা ভয় কি?
উঃ- বাস্তিল দুর্গের পতনের (১৪ জুলাই, ১৭৮৯ খ্রি.) পর ফ্রান্সের গ্রামাঞলে বিপ্লবের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এই সময় গ্রামাঞলে গুজব রটে যায় যে, অভিজাতদের ভাড়াটে গুন্ডা ও সেনাবাহিনী গ্রামের কৃষকদের শায়েস্তা করতে এগিয়ে আসছে। এই গুজবের ফলে গ্রামাঞ্চলে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যা ‘মহাতঙ্ক’ বা ‘মহাভয়’ নামে পরিচিত।
৭০. জ্যাকোবিন কারা? এই দলের কয়েকজন নেতার নাম লেখাে?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে যে উগ্র বামপন্থী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এবং ফ্রান্সের সংকটকালে দেশে সন্ত্রাসের শাসন যারা চালু করেছিল তারা জ্যাকোবিন নামে পরিচিত।
জ্যাকোবিন দলের অন্যতম নেতা ছিলেন রােবসপিয়ার, হিবার্ট, দাঁতোঁ প্রমুখ।
৭১. ফরাসি জাতীয় সভায় (১৭৮৯ খ্রি.) কাদের, কতজন প্রতিনিধি ছিল?
উঃ- ফরাসি জাতীয় সভায় মােট ১২১৪ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল। এর মধ্যে যাজকদের ৩০৮ জন, অভিজাতদের ২৮৫ জন এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের ৬২১ জন প্রতিনিধি ছিল।
৭২. সংবিধান রচনার আগে ফরাসি সংবিধান সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উল্লেখ করাে?
উঃ- সংবিধান রচনার আগে ফরাসি সংবিধান সভা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে—
[1] ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট এক ঘােষণার মাধ্যমে সংবিধান সভা ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র এবং এর যাবতীয় উপস্বত্ব বিলােপ করে।
[2] ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ব্যক্তি ও নাগরিকের ঘােষণাপত্র’ প্রকাশ করে মানুষের বিভিন্ন স্বাধীনতা, সম্পত্তি ভােগ ও দখলে অধিকার, আইনের চোখে সাম্য প্রভৃতি প্রদান করে।
৭৩. ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষণাপত্র’রচনায় কীসের প্রভাব লক্ষ করা যায়?
উঃ- ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র রচনায় ইংল্যান্ডের 'বিল অব রাইটস’ এবং আমেরিকার স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
৭৪. ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষণাপত্র’-তে কী বলা আছে?
উঃ- ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষণাপত্র’-তে বলা হয়-
[1] স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।
[2] আইনের চোখে সকল মানুষ সমান।
[3] জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস।
[4] বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ভােগ ও দখল প্রভৃতি মানুষের সর্বজনীন অধিকার।
৭৫. ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষণাপত্রের গুরুত্ব কী?
উঃ- ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘােষণাপত্রের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল-
[1] এই ঘােষণাপত্রে ফ্রান্সের পুরাতনতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়।
[2] উদারতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও মানবাধিকার রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৭৬. ফরাসি সংবিধান সভার দুটি শাসনতান্ত্রিক সংস্কার উল্লেখ করাে?
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভার উল্লেখযােগ্য শাসনতান্ত্রিক সংস্কার হল—
[1] সংবিধান সভা সম্পত্তির পরিমাণের ভিত্তিতে জনগণকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয়’—দুইভাগে বিভক্ত করে।
[2] ‘সক্রিয়’ নাগরিকদের ভােটাধিকার প্রদান করে।
৭৭. ফরাসি সংবিধান সভার একটি অর্থনৈতিক সংস্কার উল্লেখ করাে?
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভার একটি অর্থনৈতিক সংস্কার হল, এই সভা গির্জার ভূসম্পত্তি বাতিল করে এবং তা আমানতের ভিত্তিতে ‘অ্যাসাইনেট’ নামে কাগজের নােট চালু করে।
৭৮. ফরাসি সংবিধান সভার একটি ধর্মীয় সংস্কার উল্লেখ করাে।
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভার একটি ধর্মীয় সংস্কার হল—এই সভা সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ বা ‘ধর্মযাজকদের সংবিধান' নামে এক দলিল দ্বারা গির্জার ওপর থেকে পােপের আধিপত্য লুপ্ত করে এবং গির্জাকে রাষ্ট্রের একটি দপ্তরে পরিণত করে।
৭৯. সংবিধান সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ উল্লেখ করাে?
উঃ- সংবিধান সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল—
[1] সামন্ততন্ত্রের বিলােপ: সংবিধান সভা এক ঘােষণার দ্বারা [i] সামন্ত প্রথা, [ii] ভূমিদাস প্রথা, [iii] বিভিন্ন সামন্ত কর, করভি বা বেগার খাটা, টাইদ বা ধর্মকর আদায়, [iv] সামন্তশ্রেণির বিশেষ অধিকার প্রভৃতি বাতিল করলে সামন্ততন্ত্রের বিলােপ ঘটে।
[2]ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষণা: সংবিধান সভা এই ঘােষণার দ্বারা ব্যক্তিস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও ভােগের অধিকারসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষার ব্যবস্থা করে।
৮০. অ্যাসাইনেট’ কী?
উঃ- অ্যাসাইনেট হল ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সংবিধান সভা কর্তৃক প্রবর্তিত একধরনের কাগজের নােট। ফ্রান্সে প্রবল অর্থসংকট দেখা দিলে সংবিধান সভা গির্জার বাজেয়াপ্ত করা ভূসম্পত্তি আমানত রেখে তার ভিত্তিতে এই নােট চালু করে।
৮১. সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি কী?
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ বা ‘ধর্মযাজকদের সংবিধান’ নামে এক আইন পাস করে। এর দ্বারা—
[1] গির্জার ওপর পােপের যাবতীয় কর্তৃত্বের অবসান ঘটানাে হয়।
[2] গির্জাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
[3] যাজকদের নিয়ােগ ও পদচ্যুতি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
[4] সরকার যাজকদের বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করে।
৮২. সাসপেনসিভ ভিটো কী?
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনসভা কর্তৃক প্রবর্তিত কোনাে আইন রাজা সম্পূর্ণ বাতিল করতে না পারলেও তিনি তা সামরিকভাবে স্থগিত রাখতে পারতেন। রাজার এই ক্ষমতা সাসপেনসিভ ভিটো' নামে পরিচিত।
৮৩. সন্দেহের আইন’ কী?
উঃ- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনকালে এক বিশেষ আইনের দ্বারা—
[1] বিপ্লববিরােধী সন্দেহে যে-কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যেত।
[2]বিপ্লবী আদালতে তাদের বিচার হত। এই বিশেষ আইন সন্দেহের আইন' নামে পরিচিত।
৮৪. ফরাসি রাজার পলায়নের চেষ্টা সম্পর্কে কী জান?
উঃ- ফরাসি রাজা ষােড়শ লুই ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন সপরিবারে ছদ্মবেশে টুইলারিজ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে গােপনে অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার সীমান্তের কাছে ভেরেন্নে গ্রামে জনতার হাতে ধরা পড়লে চরম লানা সহকারে তাদের প্যারিসে ফিরিয়ে আনা হয়।
৮৫. ফরাসি বিপ্লবের পরে ফ্রান্সের কি কি রাজনৈতিক দল ছিল?
উঃ- ৭৪৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় প্রধানত চারটি রাজনৈতিক দল ছিল। যথা—
[1] দক্ষিণপন্থী শাসনতান্ত্রিক দল।
[2] বামপন্থী জিরন্ডিস্ট দল।
[3] চরম বামপন্থী জ্যাকোবিন দল।
[4] মধ্যপন্থী নিরপেক্ষ দল।
৮৬. ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের গুরুত্ব কী?
উঃ- ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের প্রদান গুরুত্বগুলি ছিল—
[1] এই সংবিধানের দ্বারা ফ্রান্সে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ঘােষিত হয়।
[2] ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষিত হয়।
[3] আইনের চোখে সাম্যনীতি চালু হয়।
[4] সংবিধান ঘােষণা করে যে, মাতৃভূমি হল এক ও অবিভাজ্য।
৮৭. সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড কী?
উঃ- ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের সমর্থক বহু মানুষ কারাগারে বন্দি ছিল। ফ্রান্সের রাজতন্ত্র বিরােধী উত্তেজিত জনতা কারাকক্ষে ঢুকে রাজভক্ত সন্দেহে হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে (২-৫ সেপ্টেম্বর, ১৭৯২ খ্রি.)। এই ঘটনা ‘সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত।
৮৮. কোনদলের নেতৃত্বে কোন্ সময় পর্যন্ত ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চলে?
উঃ- উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই পর্যন্ত সন্ত্রাসের শাসন চলে।
৮৯. সন্ত্রাসের শাসন শুরু হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করাে?
উঃ- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন শুরু হওয়ার দুটি কারণ ছিল—
[1] দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবিপ্লবী শক্তি বিপ্লবকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছিল।
[2] বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি ফ্রান্স আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল।
৯০. সন্ত্রাসের শাসনের অঙ্গগুলির নাম লেখাে?
উঃ- সন্ত্রাসের শাসনের অঙ্গগুলি ছিল—
[1] জননিরাপত্তা সমিতি।
[2] সাধারণ নিরাপত্তা সমিতি।
[3] সন্দেহের আইন।
[4] বিপ্লবী আদালত।
[5] বিপ্লবের বধ্যভূমি অর্থাৎ গিলােটিন।
৯১. সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান রূপকার কে ছিলেন? শ্বেত সন্ত্রাস’ বলতে কী বােঝ?
উঃ- সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান রূপকার ছিলেন জ্যাকোবিন নেতা রােবসপিয়র।
ফ্রান্সের বেকার, ভবঘুরে প্রমুখ বাসপিয়ারেণ তুঙ্গে ওয়াসহ ‘লাল সন্ত্রাসের লিঙ্গে জ্যাকোলিনদের হত্যা করতে শুরু করে। এই ঘটনা 'শ্বেতসন্ত্রাস' নামে পরিচিত।
৯২. জননিরাপত্তা সমিতি কী? এর দায়িত্ব কী ছিল?
উঃ- জাতীয় মহাসভার শাসনকালে (১৭৯১-'৯৫ খ্রি.) ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন নামে যে আপকালীন শাসন চালু হয় তার একটি অন্যতম ছিল জননিরাপত্তা সমিতি।
ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ গোলযােগ ও বৈদেশিক আক্রমণের সম্ভাবনা দূর করে বৈপ্লবিক আদর্শ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জননিরাপত্তা সমিতি গঠিত হয়।
৯৩. গিলােটিন কী ?
উঃ- গিলােটিন হল একটি যন্ত্রবিশেষ। এর আবিষ্কর্তা হলেন রানি জোসেফ ইগনিস গিলােটিন। এই যন্ত্রের সাহায্যে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বকালে বহু মানুষের শিরচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।
৯৪. সন্ত্রাসের রাজত্ব কি?
উঃ- বিপ্লবকালে ফরাসি রাজা ষােড়শ লুইয়ের মৃত্যুদণ্ডের পর ফ্রান্সে এক সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের বিপ্লবী নেতারা দেশে এক আপৎকালীন জরুরি শাসন চালু করে—যেখানে নির্বিচারে বহু নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হতে থাকে। এই আপৎকালীন শাসনব্যবস্থাই সন্ত্রাসের শাসন বা সন্ত্রাসের রাজত্ব (১৭৯৩-১৭৯৪) নামে পরিচিত।
৯৫. থার্নিডােরীয় প্রতিক্রিয়া কী?
উঃ- রােবসপিয়ার সন্ত্রাসের শাসনের দ্বারা ফ্রান্সে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালান। এতে আতঙ্কিত হয়ে জ্যাকোবিন দল ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল রােবসপিয়ার ও তার অনুগামীদের বন্দি করে পরদিন তাদের গিলােটিনে হত্যা করে। এই ঘটনা ‘থার্নিডােরীয় প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত।
৯৬. লাল সন্ত্রাস কী?
উঃ- ফ্রান্সে ১৩ এপ্রিল থেকে ২৭ জুলাই (১৭৯৪ খ্রি.) পর্যন্ত রোবসপিয়ারের একক নেতৃত্বে ভয়াবহ সন্ত্রাস চলে। এইসময় সন্ত্রাসের প্রয়ােজন ফুরিয়ে গেলেও রােবসপিয়ার নিজের ইচ্ছা জোর করে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা করেন। এই ঘটনা লাল সন্ত্রাস' নামে পরিচিত।
৯৭. ভ্রাসের শাসনকালে ফ্রান্সের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উল্লেখ করো?
উঃ- সন্ত্রাসের শাসনকালে ফ্রান্সের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্কোর ছিল—
[1] দ্রব্যের সর্বোচ্চ মূল্য এবং সর্বনিম্ন মজুরির হার বেধে দেওয়া।
[2] অবৈতনিক ও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা।
৯৮. বোরসপিয়ার কে ছিলেন?
উঃ- রোরসপিয়ার ছিলেন ফ্রান্সের উগ্র বামপন্থি জ্যাকোলিন দলের অন্যতম নেতা সন্ত্রাসের শাসনার প্রধান পরিচালক। তাঁর নেতৃত্বে হাজার হাজার নানুস সাত্তরে বল হত। তিনি নিজ ঘনিষ্ঠ হিবার্ট এবং দাঁতোকে সন্ত্রাসের দ্বারা হত্যা করেন। শেষ পর্যন্ত উদারপন্থীরা তাকে হত্যা করলে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান ।
৯৯. ডাইরেক্টরির শাসন কী?
উঃ- ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের সংবিধান প্রবারে ধ্রুপের শাসনভার ‘ডাইরেক্টর’ বা ব্যক্তির একটি কমিটির হাতে দেওয়া হয়। এই " ভাইরেক্টরির শাসন’ (১৭৯৫১৭৯৯ খি) নামে পরিচিত। শাসনব্যবসা ছিল অত্যন্ত অঞ্চ ও দুর্নীতিগুপ্ত। ডাইরেক্টরদের শাসনকালে ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে
১০০. ফরাসি বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী দুজন মহিলার নাম লেখাে?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী দুজন মহিলা হলেন—
[1] মাদাম রােনাল্ড (জ্যাকোবিন দলের নেত্রী)।
[2] ডি-আর্জন্ট (জিরন্ডিন দলের নেত্রী)।
১০১. 'দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ কী?
উঃ- জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে উত্তেজিত জনতা ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে রাজার দেহরক্ষীদের হত্যা করে। আতঙ্কিত রাজা ও রানি নিকটবর্তী আইনসভায় আশ্রয় নিলে জনতা আইনসভা ঘিরে ফেলে। জনতার দাবিতে রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাকে টেম্পল দুর্গে বন্দি করা হয়। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক লেফেভর ‘দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেন।
১০২. অ্যাসাইনেট প্রবর্তনের ফলে কী হয়েছিল?
উঃ- বিপ্লবী ফ্রান্সের সংবিধান সভা অ্যাসাইনেট নামে বিপুল পরিমাণ কাগজের নােট বাজারে ছাড়লে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। ফলে দ্রুত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং দরিদ্র জনগণ পণ্য ক্রয়ে অক্ষম হয়ে পড়ে।
১০৩. ফরাসি সংবিধান সভার মূল কাজ কী ছিল?
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভার মূল কাজ ছিল দেশ থেকে সামন্ততন্ত্রের বিলােপ ঘটানাে, বক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘােষণা করা, রাজার ক্ষমতা হ্রাস করা, ধর্ম, অর্থনীতি ও বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করা প্রভৃতি।
১০৪. মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘােষণা’ বলতে কী বোঝ?
উঃ- মানুষ ও নাগরিকের অধিকারে ঘােষণা’ বলতে বােঝায় ফরাসি বিপ্লবেরকালে ফরাসি সংবিধান সভা কর্তৃক ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের জন্য ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ঘােষিত বিভিন্ন আইনগত অধিকার।
১০৫. কীভাবে ফরাসি সংবিধান নাগরিকদের একটি বড়াে অংশকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বণ্ডিত করেছিল?
উঃ- ফরাসি সংবিধান সভা সম্পত্তি পরিমাণের ভিত্তিতে জনগণকে সক্রিয়’ ও ‘নিষ্ক্রিয়’ দুইভাগে বিভক্ত করে এবং নিষ্কিয়’ নাগরিকদের ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
0 Comments: