INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

মহাদেশীয় অবরোধ: (Continental System).

মহাদেশীয় অবরোধ: (Continental System).

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের অধীনে ইউরোপে সবচেয়ে শক্তিশালী স্থলবাহিনী থাকলেও তার নৌশক্তি ইংল্যান্ডের তুলনায় অনেক দুর্বল ছিল।



সমুদ্র সুন্দরী’ ইংল্যান্ডকে নৌযুদ্ধে পরাস্ত করা কঠিন, একথা নেপোলিয়ন ‘নীলনদের যুদ্ধে’ (১৭৯৮) ও ট্রাফালগারের যুদ্ধে’ (১৮০৫) ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে পরাজয়ের পর বুঝে গিয়েছিলেন। এই কারণে ইংল্যান্ডকে হাতে না মেরে ভাতে মারার নীতি গ্রহণ করেন। সেনাপতি লেন মন্টজেলার্ড - এর অর্থনৈতিক অবরোধের রিপোর্টের ভিত্তিতে নেপোলিয়ন তাঁর ‘মহাদেশীয় অবরোধ প্রথার' রূপরেখা তৈরি করেন। অবশ্য ডাইরেক্টরির আমলে এই আর্থিক অবরোধের কথা ভাবা হয়েছিল। ‘দোকানদারের জাতি' শিল্পবিপ্লবের উৎসভূমি ইংল্যান্ডকে জব্দ করতে হলে অর্থনৈতিক অবরোধের অস্ত্র দিয়ে তাঁর ইউরোপীয় বাণিজ্যকে ধ্বংস করতে নেপোলিয়ন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তাকেই ‘মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা' বলা হয়

ইউরোপীয় মহাদেশের সমস্ত বন্দর অবরোধ করে ব্রিটিশের সমুদ্র বাণিজ্য বন্ধ করতে নেপোলিয়ন কর্তৃক ঘোষিত 'বার্লিন ডিক্রি', ‘মিলান ডিক্রি’, ‘ওয়ারশ ডিক্রি’ ও ‘ফন্টেনস্যু ডিক্রি'র নীতিগুলিকে সম্মিলিতভাবে ‘মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা' বা 'কন্টিনেন্টাল সিস্টেম' বলে।

মহাদেশীয় অবরোধের লক্ষ্যসমূহ:
প্রথমতঃমার্কেনটাইলবাদ’ অনুসারে বিদেশি পণ্য রপ্তানি কমিয়ে স্বদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ানো।

দ্বিতীয়তঃ ইংল্যান্ড তার শিল্পজাত পণ্য ইউরোপের কোনো দেশে বিক্রি করতে না পারলে উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি অর্থহীন হবে, শিল্প-বাণিজ্য ভেঙে পড়বে, শ্রমিক বেকারে পরিণত হবে।

তৃতীয়তঃ ইউরোপের বাজার থেকে ইংল্যান্ডকে উৎখাত করে সেখানে ফ্রান্সের একচেটিয়া বাজার ও বাণিজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা চালু করা হয়।

ইংল্যান্ডের পালটা আক্রমণ: নেপোলিয়নের এই চার অবরোধ নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পালটা আঘাত হানতে ইংল্যান্ড 'অর্ডারস ইন কাউন্সিল' (১৮০৭) বা নির্দেশনামা জারির পর ঘোষণা করে, ইউরোপের কোনো দেশ ফ্রান্স বা তার কোনো মিত্র দেশ বা ফ্রান্স-অধিকৃত কোনো স্থানে পণ্যসামগ্রী পাঠালে সেই জাহাজ সমেত সমস্ত পণ্যসামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হবে।

মহাদেশীয় অবরোধের প্রভাব বা নেপোলিয়নের পতনের কারণ:
নেপোলিয়নের এই মহাদেশীয় অবরোধ ছিল অবাস্তব।
কারণ,
  • এই অবরোধকে কার্যকরী করার মতো নৌশক্তি তাঁর ছিল না। আর সেইসঙ্গে ইংল্যান্ডের সমতুল্য পণ্য ইউরোপের বাজারে সরবরাহ করার ক্ষমতাও তার ছিল না। অথচ এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়নকে কিছু নিরীহ-নিরপেক্ষ দেশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে হয়।
  • এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে তিনি পোপকে বন্দি করে খ্রিস্টান সমাজের বিরাগভাজন হন এবং সেইসঙ্গে আইবেরীয় উপদ্বীপ সহ রাশিয়া আক্রমণ করে নিজের পতন ডেকে আনেন।
  • অন্যদিকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ অবরোধ ব্রিটেনের নৌবলের জন্য বিশেষ কার্যকরী হয়। শিল্পদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে ফ্রান্স ও তার অধীনস্থ দেশগুলিতে দুর্দশা বেড়ে যায়।
  • ফ্রান্সের শিল্প এত অনুন্নত ছিল যে, তার উৎপাদন দ্বারা নিজের দেশের চাহিদা পূরণ এবং ইউরোপের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি। ফলে নেপোলিয়নের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়।
  • ইংল্যান্ড কিন্তু তার সমৃদ্ধশালী নৌ বাহিনীর সাহায্যে অর্ডারস-ইন-কাউন্সিলকে কার্যকর করতে সমর্থ হয়। ফলে নেপোলিয়ন সমগ্র ইউরোপে প্রায় মিত্রহীন হয়ে পড়েন। তাঁর নিজের সাম্রাজ্য ফ্রান্সেও তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র জনমত তৈরি হয়। এর ফলস্বরূপ নেপোলিয়নের পতন ত্বরান্বিত হয়ে পড়ে।

0 Comments: