নদীবাহিত পলি থেকে যে মাটির উৎপত্তি হয় তাকেই পলিমাটি বলা হয়। এটি ভারতের সর্বপ্রধান মাটি। সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি, দক্ষিণ ভারতের নদী অববাহিকা ও বদ্বীপ এবং পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে প্রায় ১৫ লক্ষ বর্গকিমি (৪৬%) এলাকায় পলিমাটি আছে।
গুজরাটে প্রাচীন পলিকে গোরাট বলে।
পলিমাটির উৎপত্তি:
উত্তর ভারতের নদীগুলি হিমালয় পর্বত এবং দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও পূর্ব ও পশ্চিমঘাট পর্বত ক্ষয় করে বালি, পলি, কাদা সঞ্চিত করে এবং উপকূলে সমুদ্রতরঙ্গ ক্ষয়জাত বালি, পলি সঞ্চিত করে পলি মাটি গঠন করেছে।
পলিমাটির উপাদান ও বৈশিষ্ট্য:
- এই মাটি খুব সূক্ষ্ম পলি ও খনিজ কণার সমন্বয়ে গঠিত।
- সুষম প্রথনের ( Texture ) জন্য জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি।
- জৈবপদার্থ ও নাইট্রোজেন কম থাকে। ফসফরাস ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এবং অত্যন্ত উর্বর।
- মাটি সুগভীর হয়। মাটির গভীরতা সর্বত্র একই নয়।
- মাটির স্তরগুলি সুস্পষ্ট ও সুগঠিত নয়। তাই এটি আঞ্চলিক ও অপরিণত মাটি । এটি পরিবাহিত মাটিও বটে।
- শিলা বৈশিষ্ট্যের কারণে পলি মাটির রং বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ধরনের হয়।
পলিমাটির প্রকারভেদ:
- খাদার: প্রায়ই বন্যার ফলে নদী অববাহিকায় ধূসর রঙের খুবই উর্বর পলিমাটিকে খাদার বলে। খাদার মৃত্তিকা চুনযুক্ত (Calcareous) নয়।
- ভাঙ্গার: নদী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে মাঝে মধ্যে বন্যার ফলে লালমে রঙের মোটামুটি উর্বর প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গার বলে।
- কঙ্কর বা ঘুটিং: অনেক সময় অধিক ধৌত প্রক্রিয়ার প্রভাবে ভাঙ্গার অঞ্চলের দানাযুক্ত মাটিতে চুনজাতীয় (Calcareous) পদার্থের আধিক্য দেখা যায়। এরূপ মাটিকে কঙ্কর ( Kankar ) বা ঘুটিং বলে।
- ভাবর: তরাই অঞ্চলে হিমালয়ের পাদদেশে নুড়ি ও কাঁকর মিশ্রিত পলিমাটিকে ভাবর বলে।
- ধাঙ্কার: উচ্চ গঙ্গা সমভূমিতে জলাভূমির পলিমাটিকে ধাঙ্কার বলে।
- ভূর: উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে বিশেষত উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পশ্চিমাংশের দোয়াব অঞ্চলে অতি সূক্ষ্ম মৃত্তিকা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায়, যা ভূর নামে পরিচিত।
পলিমাটির গুরুত্ব:
পলিমাটি অঞ্চল হল ভারতের খাদ্য ভাণ্ডার।
এই মাটির সর্বত্র ধান, পাট, আখ, শাকসবজি, আলু, তৈলবীজ চাষ প্রসার লত করেছে। উপকূলীয় পরিমাটিতে তরমুজ, ফুটি, শশা, কাজুবাদাম হয়ে থাকে।
0 Comments: