Indianconstitution
ভারতের পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী: (The Parliament of India).
ভারতের পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত হয়। পার্লামেন্টের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করেন রাষ্ট্রপতি এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভা (৭৯ নং ধারা)।
রাজ্যসভার গঠন:
ভারতের সংবিধানের ৮০ নং ধারায় রাজ্যসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা গঠিত হয় অনধিক ২৫০ জন সদস্যকে নিয়ে (২৩২ জন অঙ্গরাজ্য থেকে, ৩ জন দিল্লি রাজধানী অঞ্চল থেকে, ১ জন পন্ডিচেরি থেকে, ২ জন POK থেকে, ১২ জন মনোনীত। কিন্তু বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা ২৪৫ জন (২২৯ জন অঙ্গরাজ্য গুলি থেকে, ৪ জন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে এবং রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞান,সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে থেকে ১২ জন সদস্যকে মনোনীত করেন। পদাধিকারবলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার সভাপতিত্ব করেন।
লোকসভার গঠন:
ভারতের সংবিধানের ৮১ নং ধারায় লোকসভা গঠণের কথা বলা হয়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা ৫৫২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। তবে বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৫ জন। এরমধ্যে রাষ্ট্রপতি দুইজন ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্যকে লোকসভায় মনোনীত করেন। লোক সভায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার বা অধ্যক্ষ।
পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী:
ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর পার্লামেন্ট বহু ক্ষমতার অধিকারী। তার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা ও কার্যাবলী গুলি হলঃ-
আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা:
সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করা। কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত ৯৯ টি বিষয়, যুগ্ম তালিকাভুক্ত ৫২ টি এবং রাজ্য তালিকাভুক্ত ৬১ টি বিষয়ে আইন প্রণয়ন করার অধিকারী পার্লামেন্ট। এছাড়াও অবশিষ্ট বিষয় নিয়ে আইন প্রণয়ন করে পার্লামেন্ট।
শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ:
সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল লোকসভায় মন্ত্রীসভা গঠন করে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা হলো দেশের শাসন বিভাগের কর্ণধার। এছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে পার্লামেন্ট শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে।যেমন বাজেটের সমালোচনা, মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন, দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশ দিয়ে নিন্দাসূচক প্রস্তাব ,অনাস্থা প্রস্তাব প্রভৃতির মাধ্যমে।
আয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ:
ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ব্যায় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পার্লামেন্টকে দেওয়া হয়েছে। মূলত লোকসভায় নির্বাচিত সদস্যদের উপর এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংবিধানে ২৬৫ ও ২৬৬ নং ধারা অনুযায়ী সরকারের ব্যয় বরাদ্দ, কর আরোপ,সংগ্রহ প্রভৃতি বিষয়গুলি দেখার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যথা:- PAC ও Estimate committee.
নির্বাচন ও অপসারণ:
ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যরা অংশ নিয়ে থাকেন। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার,ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাপরীক্ষক প্রমুখকে অযোগ্যতা ও অসদাচরণের অভিযোগে পদচ্যুত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও পার্লামেন্টের রয়েছে।
সংবিধান সংশোধন:
সংবিধানের ৩৬৮ নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্ট সাধারন পদ্ধতিতে আবার কিছু বিশেষ পদ্ধতিতে সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে একক ক্ষমতা ভোগ করে।
জরুরি অবস্থার ঘোষণা অনুমোদন:
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা ঘোষিত তিন ধরনের জরুরি অবস্থা,
যথা:-
জাতীয় জরুরি অবস্থা (৩৫২ নং ধারা)।
অঙ্গরাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা জনিত জরুরি অবস্থা (৩৫৬ নং ধারা)।।
আর্থিক জরুরি অবস্থা (৩৬০ নং ধারা)।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের অনুমোদিত হতে হয়। তা না হলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়।
বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা:
পার্লামেন্টের কিছু ক্ষেত্রে বিচার বিষয়ক ক্ষমতা রয়েছে।
যেমন:- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্ট স্থাপন করা অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত হাইকোর্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারেও পার্লামেন্ট কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। আবার পার্লামেন্টের বিধি ভঙ্গের কারণে কোনো সদস্যকে শাস্তি দিতে পারে পার্লামেন্ট।
অন্যান্য ক্ষমতা:
উপরের উল্লেখিত ক্ষমতাগুলি ছাড়াও সংসদের আরো কিছু ক্ষমতা রয়েছে।
যেমন:- নতুন রাজ্য গঠন করা, জনমত গঠন, রাজ্যের সীমানার নাম পরিবর্তনের ক্ষমতাও রয়েছে। আবার পার্লামেন্ট কোনো রাজ্য আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষের বিলোপও ঘটাতে পারে। এছাড়াও সর্বভারতীয় চাকরির ক্ষেত্রে বসবাসরত যোগ্যতা নির্ধারণ করার অধিকারী পার্লামেন্ট।
0 Comments: