১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে গৌরবময় বিপ্লবের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে ও শান্তির পরিবেশ গড়ে ওঠে। সরকারি তরফে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঢালাও ঋণ দিতে শুরু করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, কৃষির উন্নতিসহ অন্যান্য অনুকূল উপাদানের সাহায্যে ইংল্যান্ডেই বিশ্বের মধ্যে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটে।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার:
ইংল্যান্ডে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার শিল্পবিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছিল। যেমন,
- জন কে -র ‘উড়ন্ত মাকু’ বা ‘ফ্লাইং শাটল' (১৭৩৩ খ্রিঃ)।
- জন স্মিটনের ব্লাস্ট ফারনেস (১৭৬০ খ্রিঃ)।
- হারগ্রিভসের স্পিনিং জেনি (১৭৬৫ খ্রিঃ)।
- আর্করাইটের ওয়াটার ফ্রেম (১৭৬৯ খ্রিঃ)।
- জেমস ওয়াট –এর বাষ্পীয় ইঞ্জিন (১৭৬৯ খ্রিঃ)।
- কার্টরাইটের মিউল (১৭৮৫ খ্রিঃ)।
- ম্যাথু বোল্টনের বোল্টন ইঞ্জিন।
- টেলফোর্ড ও ম্যাকডামের পিচ রাস্তা তৈরির কৌশল (১৮১১ খ্রিঃ)।
- জর্জ স্টিভেনসনের বাষ্পচালিত রেলইঞ্জিন (১৮১৪ খ্রিঃ)।
- হামফ্রে ডেভির সেফটি ল্যাম্প (১৮১৫ খ্রিঃ)।
- ফুলটনের বাষ্পীয় পোত (১৮১৫ খ্রিঃ) আবিষ্কার শিল্পবিপ্লবে সহায়তা করে।
কৃষির উন্নতি:
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে কৃষকরা কৃষি থেকে ভালো আয় করায় শিল্পদ্রব্য কেনার ক্ষমতা অর্জন করে। কৃষিবিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ড খাদ্যশস্য ও কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছিল। ফলস্বরূপ কৃষকশ্রেণির সাহায্যে এক শিল্পকেন্দ্রিক বাজার গড়ে তোলা সহজ হয়। কৃষির ওপর ভিত্তি করে শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপট রচিত হয়।
মূলধনের প্রাচুর্য:
সামুদ্রিক বাণিজ্যের মধ্যে দিয়ে, বিশেষ করে ভারতবর্ষের সঙ্গে একচেটিয়া বাণিজ্য ও ভারতের সম্পদ লুণ্ঠন করে এবং আমেরিকা থেকে সোনা নিয়ে এসে ইংল্যান্ড তখন ধনসম্পদে পূর্ণ একটি দেশ। এ ছাড়াও ১৮ শতকের ইংল্যান্ডে ব্যাংকিং ও ইনসিওরেন্স প্রথা চালু হলে ইংল্যান্ডের শিল্পক্ষেত্রে জোয়ার আসেI
অনকুল প্রাকৃতিক পরিবেশ:
উত্তরসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যবর্তীস্থানে অবস্থিত ইংল্যান্ডের স্যাতসেঁতে আবহাওয়া শিল্প উৎপাদনে, বিশেষ করে বস্ত্রশিল্পের পক্ষে ছিল খুবই অনুকূল। এ ছাড়াও, এখানে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যবন্দর , প্রচুর খাল ও খাঁড়ির অবস্থান থাকায় কাঁচামাল ও শিল্পজাত পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হয়।
কাঁচামালের প্রাচুর্য:
ভারী শিল্পের প্রধান উপকরণ হল কয়লা ও লোহা। ইংল্যান্ডের খনিগর্ভে কয়লা, লোহা ছাড়াও টিন ও তামার ভাণ্ডার বৃহৎ শিল্পের দ্রুত প্রসারকে সহায়তা দান করেছিল।
সুলভ শ্রমিকের সুবিধা:
শিল্পের বিকাশে মূলধন ও উপকরণের পাশাপাশি সুলভ শ্রমিকের বিশেষ প্রয়োজন। আঠারো শতকে ইংল্যান্ডে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমিচ্যুত বেকার কৃষকের সংখ্যাবৃদ্ধি সুলভ স্বাধীন শ্রমিকের সৃষ্টি করে শিল্পবিপ্লবকে সাহায্য করে।
কাঁচামাল ও বাজার:
ভারতবর্ষ, আমেরিকা ও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের ইংরেজ উপনিবেশগুলি থেকে যেমন সস্তায় প্রচুর কাঁচামাল ইংল্যান্ডে আসত, তেমনি ওই স্থানগুলি আবার ইংল্যান্ড – জাত পণ্যদ্রব্যের একচেটিয়া বাজার ছিল, যা উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে সাহায্য করে।
সরকারি তরফে পুঁজির লগ্নিতে উৎসাহ দান, সরকারি ঋণের ওপর সুদের হার কমানো, বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো এবং আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসানোর দ্বারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পবিপ্লব ঘটে। এতসব সুযোগসুবিধা সে সময়কার ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে কেবলমাত্র ইংল্যান্ডেই বর্তমান থাকায় ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব হয়।
0 Comments: