Europeanhistory
History
শিল্প বিপ্লবের ফলাফল বা প্রভাব: (The Industrial Revolution).
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্প বিপ্লবের ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ফলগুলি অত্যন্ত সুদুরপ্রসারী হয়েছিল। এই বিপ্লবের ফলে যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দেয় তা একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করে।
- রাজনৈতিক প্রভাব:
এতদিন ইউরোপের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভূস্বামী ও অভিজাতরাই একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করত। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজে মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির উদ্ভব হওয়ায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে।
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সৃষ্টি:
শিল্পবিপ্লবের আগে পর্যন্ত শিক্ষিতশ্রেণির মধ্যেই গণতান্ত্রিক আদর্শ সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন থেকে মালিকশ্রেণির সঙ্গে শ্রমিকশ্রেণিও ওই অধিকার দাবি করতে শুরু করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকশ্রেণি সংঘবদ্ধ হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলে।
ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা:
শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সন্ধানে বিভিন্ন দেশ ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে।
- সামাজিক প্রভাব:
নগর-সভ্যতার উন্মেষ:
গ্রামের কৃষিজীবী মানুষ দলে দলে চাকরি ও নিরাপদ নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানিতে শহরে আসতে শুরু করে। ফলে একদিকে শহরগুলি যেমন জনবহুল হয়ে ওঠে, অন্যদিকে তেমনি গ্রামগুলি ক্রমশ জনশূন্য হয়ে পড়ে। এইভাবে গ্রামগুলি শ্রীহীন হয়ে পড়ে, পরিবর্তে শিল্পনগরীগুলিই দেশের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে, নগর সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।
শোষক ও শোষিত শ্রেণির উদ্ভব:
কুটিরশিল্পকে ধ্বংস করে কলকারখানা গড়ে ওঠার কারণে কৃষকদের মতো তাঁতি ও কারিগররাও পরিণত হয় দিনমজুরে। এইভাবে শিল্পবিপ্লব সমাজে দুটি নতুন শ্রেণির জন্ম দেয় ধনী মালিকশ্রেণি ও শোষিত দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণি।
বুর্জোয়াশ্রেণির উদ্ভব:
শিল্পবিপ্লবের ফলে আগের অভিজাত সামন্তশ্রেণির অবলুপ্তি ঘটে। তার জায়গায় সৃষ্টি হয় ধনী বুর্জোয়াশ্রেণির। ফলে সামাজিক শোষণের রূপ পালটে যায়। সামন্তপ্রভুর জায়গায় শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এই নতুন বুর্জোয়াশ্রেণি।
- অর্থনৈতিক প্রভাব:
শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি:
শিল্পবিপ্লব পৃথিবীতে যন্ত্রযুগের সূত্রপাত করে। ফলে পুরাতন কৃষিনির্ভর কুটিরশিল্পভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে গড়ে ওঠে নগরকেন্দ্রিক বৃহৎশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি।
অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ:
অল্প সময়ে প্রচুর পণ্যসামগ্রী উৎপন্ন হওয়ায় ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এক বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা৷ রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে পৃথিবীতে জন্ম নেয় অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ।
শ্রমবিভাজন নীতি:
শিল্পবিপ্লব ‘ফ্যাক্টরি প্রথা’ অর্থাৎ বৃহৎ কারখানার জন্ম দেয়। ফ্যাক্টরিতে এক একটি বিভাগ কোনো দ্রব্যের এক একটি মাত্র অংশ তৈরির দায়িত্বে থাকে। ফলে বিপুল উৎপাদনের পাশাপাশি শিল্পে সৃষ্টি হয় শ্রম বিভাজন নীতি।
শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি:
সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে শিল্পপতিরা শ্রমিকদের যতদূর সম্ভব কম মজুরি দিতে থাকলে শ্রমিকশ্রেণি শোষণের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ায়। এইভাবে শিল্পবিপ্লবের ফলে বৈষম্য প্রকট হয়। ধনী দিন দিন আরও ধনী এবং দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে।
উপসংহার:
শিল্প বিপ্লবের ফলে অতি দ্রুত কৃষিপ্রধান দেশগুলি শিল্পপ্রধান দেশে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতিকে হঠিয়ে পৃথিবীর বুকে ধনতন্ত্র, নিজের চলার পথ করে নিতে থাকে জন্ম হয় এক নতুন সভ্যতার।
0 Comments: