Geography
আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর: (Weather & Climate).
১. আবহাওয়া (Weather) বলতে কী বােঝাে?
উঃ- আবহাওয়া বলতে কোনও নির্দিষ্ট স্থানের, নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমন্ডলের (উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, মেঘপু্ঞ্জ প্রভৃতি) অবস্থাকে বােঝায়, আবহাওয়া সর্বদা পরিবর্তনশীল। আবহাওয়া প্রতিদিন, প্রতিঘন্টা এমনকি প্রতি মিনিটে পরিবর্তন বা হতে পারে।২. জলবায়ু (Climate) বলতে কী বােঝাে?
উঃ- বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী আবহাওয়ার উপাদানগুলির দীর্ঘকালীন (কমপক্ষে ৩০-৪০ বছরের) গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে। জলবায়ুর সময়গত ও অঞ্চলগত পরিবর্তন খুব ধীরে ঘটে।
৩. আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলি কী কী?
উঃ- আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলাে হল-
- বায়ুর উষ্ণতা।
- বায়ুর চাপ।
- বায়ুপ্রবাহ।
- বায়ুর গতিবেগ।
- মেঘপুঞ্জ।
- বায়ুর আর্দ্রতা।
- অধুক্ষেপণ।
- শিশির, কুয়াশা ও তুহিন।
৪. আবহবিদ্যা (Meteorology) কাকে বলে?
উঃ- বায়ুমন্ডলে সংঘটিত ভৌত ঘটনা ও ভৌত প্রক্রিয়ার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানের যে শাখায় করা হয়, তাকে আবহবিদ্যা বলে।
৫. আবহবিদ্যার প্রধান কাজ কী?
উঃ- আবহবিদ্যার একটি প্রধান কাজ হল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Forecasting) দেওয়া, যথা-বর্তমান যুগে, বিশেষত বিমান পরিবহনে বিশেষ প্রয়ােজন এবং এজন্য প্রয়ােজনীয় সিনপৃটিক লেখচিত্র (Synoptic Chart) তৈরি করা।
৬. জলবায়ুবিদ্যার (Climatology) গুরুত্ব কী?
উঃ- জলবায়ুবিদ্যার গুরুত্ব ভৌগােলিকগণের নিকট অপরিসীম। কারণ এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন ঘটনাবলীর বিস্তৃতি সম্বন্ধে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করে। জলবায়ু বিদ্যা-বিশারদগণ (Climatologist)বিভিন্ন ভৌগােলিক পরিবেশ বা কাঠামােয় বিভিন্ন জলবায়ুর বিবরণই যে কেবল দিয়ে থাকেন তা নয়, উপরস্তু ওই বিশেষ জলবায়ুর ওই বিশেষ অবস্থানের কারণ সম্বন্ধেও ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।
৭. অণুজলবায়ুবিদ্যার (Micro-climatology) কাজ কী?
উঃ- অণুজলবায়ুবিদ্যার প্রকৃতি অথবা মনুষ্য-সৃষ্ট উদ্ভিদমন্ডলীর অন্তর্গত ক্ষুদ্রাকার অঞ্লের আবহাওয়ার বিভিন্ন বিষয় পরিবেশগত দিক থেকে বিচার করে পুখানুপুঞ্বরুপে পাঠ করা হয়।
৮. পূর্বে ও সম্প্রতি আবহাওয়ার পূর্বাভাস কীভাবে দেওয়া হয়?
উঃ- পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্লের অবস্থিত অফিসগুলিতে বায়ুমন্ডলের উপাদানগুলির বৈচিত্র্য প্রত্যহ লিপিবদ্ধ করা হত এবং তার সাহায্যে একটি সিনপটিক লেখচিত্র (Synoptic Chart) তৈরি করা হয়। এই সিনপৃটিক লেখচিত্রের সাহায্যেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভবপর হয়।সম্প্রতি বহু দেশ (ভারত, জাপান, আমেরিকা, রাশিয়া) মহাকাশে আবহাওয়া উপগ্রহ (Weather Satellite)উৎক্ষিপ্ত করে তার সাহায্যে রাডার (RADAR) যন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় নির্ভুলভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে।
৯. আবহাওয়া মানচিত্র (Weather Maps) কাকে বলে?
উঃ- যে মানচিত্রের মাধ্যমে আবহাওয়া সক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, যেমন বায়ুচাপের পরিবর্তন, বায়ুপ্রবাহের গতিপথ,বৃষ্টিপাত, আকাশে মেঘের অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় এবং আগামীদিনের আবহাওয়ার ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব হয়, তাকে আবহাওয়া মানচিত্র বলে।
১০. আবহাওয়া চিত্র (Weather Chart/Synoptic Chart) কাকে বলে?
উঃ- কোনও স্থানের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নেওয়া আলােকচিত্র কিংবা মানচিত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিশদ তথ্য সন্নিবেশ করলে সেই চিত্র বা মানচিত্রকে আবহাওয়া চিত্র বলে।
১১. আবহাওয়া চিত্রকে সারচিত্র বলে কেন?
উঃ- আবহাওয়া চিত্র থেকে কোনও বিশেষ সময়ে আবহাওয়ার যাবতীয় তথ্য এক নজরে পাওয়া যায় বলে এগুলিকে সারচিত্রও বলে। কাল পরম্পরায় আঁকা কয়েকটি আবহাওয়া চিত্রের উপর ভিত্তি করেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে।
১২. আবহাওয়া চিত্র (Weather Chart) কীভাবে তৈরি হয়?
উঃ- আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যগুলি সাধারণত একটি বিশেষ সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। এই সময়টা দেশের প্রমাণ-সময়ের দুপুর অথবা রাত বারােটা, কিংবা গ্রীনিচ সময়ের দুপুর অথবা রাত বারােটা। তথ্যগুলি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সাংকেতিক রিপাের্টরুপে গৃহীত হয়। সাধারণত তিনঘণ্টা বা ছ’ঘণ্টার মেয়াদে টানা আবহাওয়া চিত্র তৈরি হয়। সব তথ্য বসানাে হলে সমচাপ রেখা আঁকা যায় এবং নিম্নচাপ, প্রতীপ নিম্নচাপ, (উচ্চচাপ) ঘুর্ণিঝড়, বায়ুপ্রাচীর ইত্যাদির অবস্থান এবং সঞ্চার সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।
১৩. সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা (Isobar) কাকে বলে?
উঃ- কোনও নির্দিষ্ট সময়ে ভূ-পৃষ্ঠের সমচাপযুক্ত স্থানগুলিকে (উচ্চস্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রতলের চাপে পারিণত করে) মানচিত্রে যে রেখা দ্বারা যােগ করা হয় তাকেই সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা বলে।
১৪. বায়ুচাপের প্রবণতা বা ঢাল (Pressure Gradient) বলতে কী বােঝো ?
উঃ- প্রতি একক দূরত্বে বা বায়ুচাপের হ্রাস বা বৃদ্ধির হারকে বায়ুচপের প্রবণতা/ঢাল (Pressure gradient) বলে। সমচাপ রেখাগুলি যত কাছাকাছি হবে বায়ুচাপের ঢাল তত বেশি হবে এবং সমচাপ রেখাগুলি যত দূরত্বে অবস্থান করবে বায়ুচাপের ঢাল/প্রবণতা তত কম হবে।
১৫. চাপ বলয়ের বিচলন (Swing of Pressure belts)?
উঃ- ঋতু অনুযায়ী বায়ুমন্ডলের চাপবলয়গুলির সবান পরিবর্তনকে চাপ বলয়ের বিচলন বলে। এই চাপবলয়ের বিচলন উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে উত্তরমুখী, শীতকালে দক্ষিণমুখী এবং মাথার উপরে সূর্য এবং তাপ বিষুবরেখার অনুগামী।
১৬. উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কাকে বলে?
উঃ- পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে স্থান ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুচাপেরও পরিবর্তন হয়। বায়ুচাপ দু’প্রকার
(ক) উচ্চচাপ: বলতে বােঝায় যেখানে বায়ুচাপ বেশি। ব্যারােমিটারে পারদস্তম্ভের উচ্চতা ৭৬০ মিমি (১০১৩.২৫ মিলিবার) বা তারও বেশি।
(খ) নিম্নচাপ: নিম্নচাপ বলতে বােঝায় যেখানে ব্যারােমিটার পারদস্তম্ভের উচ্চতা ৭৬০ মিমি, (১০১৩.২৫ মিলিবার) এর কম। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ নির্ণয়ের সুনির্দিষ্ট কোনও মাপকাঠি থাকে না। পাশাপাশি অঞ্চলে বায়ুচাপের আপেক্ষিক তারতমাের উপর ভিত্তি করেই উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ নির্ধারিত হয়।
১৭. বায়ুচাপের একক কী?
উঃ- বায়ুচাপ মাপার একক হল মিলিবার (mb)। এক মিলিবার হল এমন একটি শক্তি, যা প্রতি সেমিতে ১০০০ ডাইন চাপ দেয়। সমুদ্রপৃষ্ঠে গড় বায়ুচাপ ১০১৩.২৫ মিলিবার বা ৭৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভের উচ্চতার সমান।
১৮. বায়ুচাপ মাপক যন্ত্রের নাম কী?
উঃ- বায়ুমন্ডলের চাপ ব্যারােমিটার যন্ত্রে পারদ-স্তম্ভের উচ্চতা দারা মাপা হয়।
১৯. গ্রীষ্ম এবং শীতের ক্ষেত্রে কোনও ডায়াগ্রাম্যাটিক পার্থক্য আছে?
উঃ- গ্রীষ্মকালে স্থলভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চচাপ থাকবে, শীতকালে স্থলভাগে উচ্চচাপ ও জলভাগে নিম্নচাপ বিরাজ করবে।
২০. বায়ুপ্রবাহ (Wind low) কাকে বলে?
উঃ- উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বায়ু ধাকিত হলে তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে।
২১. বায়ুপ্রবাহের কারণ কী?
উঃ-
২২. বায়ুর গতিপ্রবাহ দিক নির্ণয়কারী যন্ত্রের নাম কী?
উঃ- বায়ু ঘূর্ণি বা বাত পতাকা (Wind Vane) যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর গতিপথ বা প্রবাহপথ নির্ণয় করা হয়।
২৩. বায়ুর গতিবেগ নির্ণয়কারী যন্ত্রের নাম কী?
উঃ- আ্যানিমােমিটার (Anemometer) যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর গতিবেগ নির্ণয় করা যায়।
২৪. বায়ুর গতিবেগ কোন একক (Unit) পরিমাপ করা হয়?
উঃ- বায়ু গতিবেগ নটু (Knot)-এ প্রকাশ করা হয়। (১ নট = ৬০৮০ feet = ১ নটিক্যাল মাইল)। (১ mile = ১.৬০৯৩৪৪ km)।
২৫. আর্দ্রবায়ু কাকে বলে?
উঃ- যখন বায়ুর মধ্যে বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তখন সেই বায়ুকে আর্দ্রবায়ু বলে।
২৬. সম্পূক্ত বায়ু (Saturated Wind) কাকে বলে?
উঃ- উষ্ণতা নির্দিষ্ট থাকলে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বাতাস যখন সর্বোচ্চ পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে, তখন সেই বাতাসকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে।
২৭. আর্দ্রতা কোন যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়?
উঃ- হাইগ্রোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়।
২৮.আপেক্ষিক আর্দ্রতা কোন যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়?
উঃ- শুদ্ক ও আর্দ্রকুল্ড-যুক্ত হাইগ্রোমিটার (Dry & Wet Bulb Thermometer)-এর সাহায্যে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার মাপ করা হয়।
২৯. মেঘ (Cloud) কী?
উঃ- বাতাসে ভাসমান ছােট ছােট জলকণা বা তুষারকণাকে মেঘ বলে।
৩০. উচ্চতা-অনুসারে মেঘ কয়প্রকার ও কী কী?
উঃ- তিন প্রকার যথা
(i] উঁচু (High cloud), [ii] মাঝারি (Medium cloud), [iii] নিচু (Low cloud)।
৩১. উঁচু মেঘ কাকে বলে?
উঃ- ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬১৫০-১২,৩০০ মিটারের মধ্যবর্তী উচ্চতায় বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখা যায় তাকে উঁচু মেঘ বলে। এই মেঘে বৃষ্টিপাত হয় না। উদাহরণ: [a] সিরাস, (b] সিরাে-কিউমুলাস, [c] সিরাে স্ট্যাটাস।
৩২. মাঝারি মেঘ কাকে বলে?
উঃ- ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪৬০ থেকে ৬১৫০ মিটারের মধ্যবর্তী বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখা যায় তাকে মাঝারি মেঘ বলে।
উদাহরণ:
[a] অন্টো-কিউমুলাস- পরিষ্কার আবহাওয়া সূচনা করে।
[b] অন্টো-স্ট্র্যাটাস- খারাপ আবহাওয়া ও প্রবল বৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়।
৩৩. নিচু মেঘ কাকে বলে?
উঃ- ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৪৬০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখতে পাওয়া যায় তাকে নিচু মেঘ বলে।
উদাহরণ:
[a] স্ট্যাটো-কিউমুলাস- প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।
উঃ- বায়ুমন্ডলে সংঘটিত ভৌত ঘটনা ও ভৌত প্রক্রিয়ার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানের যে শাখায় করা হয়, তাকে আবহবিদ্যা বলে।
৫. আবহবিদ্যার প্রধান কাজ কী?
উঃ- আবহবিদ্যার একটি প্রধান কাজ হল আবহাওয়ার পূর্বাভাস (Forecasting) দেওয়া, যথা-বর্তমান যুগে, বিশেষত বিমান পরিবহনে বিশেষ প্রয়ােজন এবং এজন্য প্রয়ােজনীয় সিনপৃটিক লেখচিত্র (Synoptic Chart) তৈরি করা।
৬. জলবায়ুবিদ্যার (Climatology) গুরুত্ব কী?
উঃ- জলবায়ুবিদ্যার গুরুত্ব ভৌগােলিকগণের নিকট অপরিসীম। কারণ এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন ঘটনাবলীর বিস্তৃতি সম্বন্ধে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করে। জলবায়ু বিদ্যা-বিশারদগণ (Climatologist)বিভিন্ন ভৌগােলিক পরিবেশ বা কাঠামােয় বিভিন্ন জলবায়ুর বিবরণই যে কেবল দিয়ে থাকেন তা নয়, উপরস্তু ওই বিশেষ জলবায়ুর ওই বিশেষ অবস্থানের কারণ সম্বন্ধেও ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।
৭. অণুজলবায়ুবিদ্যার (Micro-climatology) কাজ কী?
উঃ- অণুজলবায়ুবিদ্যার প্রকৃতি অথবা মনুষ্য-সৃষ্ট উদ্ভিদমন্ডলীর অন্তর্গত ক্ষুদ্রাকার অঞ্লের আবহাওয়ার বিভিন্ন বিষয় পরিবেশগত দিক থেকে বিচার করে পুখানুপুঞ্বরুপে পাঠ করা হয়।
৮. পূর্বে ও সম্প্রতি আবহাওয়ার পূর্বাভাস কীভাবে দেওয়া হয়?
উঃ- পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্লের অবস্থিত অফিসগুলিতে বায়ুমন্ডলের উপাদানগুলির বৈচিত্র্য প্রত্যহ লিপিবদ্ধ করা হত এবং তার সাহায্যে একটি সিনপটিক লেখচিত্র (Synoptic Chart) তৈরি করা হয়। এই সিনপৃটিক লেখচিত্রের সাহায্যেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভবপর হয়।সম্প্রতি বহু দেশ (ভারত, জাপান, আমেরিকা, রাশিয়া) মহাকাশে আবহাওয়া উপগ্রহ (Weather Satellite)উৎক্ষিপ্ত করে তার সাহায্যে রাডার (RADAR) যন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় নির্ভুলভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে।
৯. আবহাওয়া মানচিত্র (Weather Maps) কাকে বলে?
উঃ- যে মানচিত্রের মাধ্যমে আবহাওয়া সক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, যেমন বায়ুচাপের পরিবর্তন, বায়ুপ্রবাহের গতিপথ,বৃষ্টিপাত, আকাশে মেঘের অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় এবং আগামীদিনের আবহাওয়ার ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব হয়, তাকে আবহাওয়া মানচিত্র বলে।
১০. আবহাওয়া চিত্র (Weather Chart/Synoptic Chart) কাকে বলে?
উঃ- কোনও স্থানের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নেওয়া আলােকচিত্র কিংবা মানচিত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিশদ তথ্য সন্নিবেশ করলে সেই চিত্র বা মানচিত্রকে আবহাওয়া চিত্র বলে।
১১. আবহাওয়া চিত্রকে সারচিত্র বলে কেন?
উঃ- আবহাওয়া চিত্র থেকে কোনও বিশেষ সময়ে আবহাওয়ার যাবতীয় তথ্য এক নজরে পাওয়া যায় বলে এগুলিকে সারচিত্রও বলে। কাল পরম্পরায় আঁকা কয়েকটি আবহাওয়া চিত্রের উপর ভিত্তি করেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে।
১২. আবহাওয়া চিত্র (Weather Chart) কীভাবে তৈরি হয়?
উঃ- আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যগুলি সাধারণত একটি বিশেষ সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। এই সময়টা দেশের প্রমাণ-সময়ের দুপুর অথবা রাত বারােটা, কিংবা গ্রীনিচ সময়ের দুপুর অথবা রাত বারােটা। তথ্যগুলি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সাংকেতিক রিপাের্টরুপে গৃহীত হয়। সাধারণত তিনঘণ্টা বা ছ’ঘণ্টার মেয়াদে টানা আবহাওয়া চিত্র তৈরি হয়। সব তথ্য বসানাে হলে সমচাপ রেখা আঁকা যায় এবং নিম্নচাপ, প্রতীপ নিম্নচাপ, (উচ্চচাপ) ঘুর্ণিঝড়, বায়ুপ্রাচীর ইত্যাদির অবস্থান এবং সঞ্চার সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।
১৩. সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা (Isobar) কাকে বলে?
উঃ- কোনও নির্দিষ্ট সময়ে ভূ-পৃষ্ঠের সমচাপযুক্ত স্থানগুলিকে (উচ্চস্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রতলের চাপে পারিণত করে) মানচিত্রে যে রেখা দ্বারা যােগ করা হয় তাকেই সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা বলে।
- উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুর চাপের সম্পর্ক যেহেতু গভীর তাই বেশ কিছু ক্ষেত্র সমচাপ রেখাগুলি অক্ষরেখার সমান্তরালে অবস্থান করে।
- সমচাপ রেখাগুলি চক্রাকারে অবস্থান করলে তাকে বায়ুচাপের কোশ বলে। দীর্ঘকায় নিম্নচাপকে Trough এবং দীর্ঘকায় উচ্চচাপকে Ridge বলে।
- সমচাপ রেখাগুলি দূরে দূরে অবস্থান করলে আবহাওয়া সাধারণত শান্ত থাকে এবং রেখাগুলি কাছাকাছি চক্রাকারে অবস্থান করলে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
১৪. বায়ুচাপের প্রবণতা বা ঢাল (Pressure Gradient) বলতে কী বােঝো ?
উঃ- প্রতি একক দূরত্বে বা বায়ুচাপের হ্রাস বা বৃদ্ধির হারকে বায়ুচপের প্রবণতা/ঢাল (Pressure gradient) বলে। সমচাপ রেখাগুলি যত কাছাকাছি হবে বায়ুচাপের ঢাল তত বেশি হবে এবং সমচাপ রেখাগুলি যত দূরত্বে অবস্থান করবে বায়ুচাপের ঢাল/প্রবণতা তত কম হবে।
১৫. চাপ বলয়ের বিচলন (Swing of Pressure belts)?
উঃ- ঋতু অনুযায়ী বায়ুমন্ডলের চাপবলয়গুলির সবান পরিবর্তনকে চাপ বলয়ের বিচলন বলে। এই চাপবলয়ের বিচলন উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে উত্তরমুখী, শীতকালে দক্ষিণমুখী এবং মাথার উপরে সূর্য এবং তাপ বিষুবরেখার অনুগামী।
১৬. উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কাকে বলে?
উঃ- পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে স্থান ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুচাপেরও পরিবর্তন হয়। বায়ুচাপ দু’প্রকার
(ক) উচ্চচাপ: বলতে বােঝায় যেখানে বায়ুচাপ বেশি। ব্যারােমিটারে পারদস্তম্ভের উচ্চতা ৭৬০ মিমি (১০১৩.২৫ মিলিবার) বা তারও বেশি।
(খ) নিম্নচাপ: নিম্নচাপ বলতে বােঝায় যেখানে ব্যারােমিটার পারদস্তম্ভের উচ্চতা ৭৬০ মিমি, (১০১৩.২৫ মিলিবার) এর কম। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ নির্ণয়ের সুনির্দিষ্ট কোনও মাপকাঠি থাকে না। পাশাপাশি অঞ্চলে বায়ুচাপের আপেক্ষিক তারতমাের উপর ভিত্তি করেই উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ নির্ধারিত হয়।
১৭. বায়ুচাপের একক কী?
উঃ- বায়ুচাপ মাপার একক হল মিলিবার (mb)। এক মিলিবার হল এমন একটি শক্তি, যা প্রতি সেমিতে ১০০০ ডাইন চাপ দেয়। সমুদ্রপৃষ্ঠে গড় বায়ুচাপ ১০১৩.২৫ মিলিবার বা ৭৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভের উচ্চতার সমান।
১৮. বায়ুচাপ মাপক যন্ত্রের নাম কী?
উঃ- বায়ুমন্ডলের চাপ ব্যারােমিটার যন্ত্রে পারদ-স্তম্ভের উচ্চতা দারা মাপা হয়।
- ফর্টিন ব্যারােমিটার এই যনত্রে বায়ুর চাপ নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায়।
- অ্যানিরয়েড ব্যারােমিটার এই যন্ত্র আয়তনে ছােট হওয়ায় সর্বত্র ব্যবহারের উপযােগী।
- অন্টিমিটার উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গ সঙ্গে চাপের পরিবর্তন এই যন্ত্রে ধরা পড়ে, তাই বিমানে এই যন্ত্র রাখা থাকে।
- ব্যারােগ্রাম এর সাহায্যেও বায়ুচাপের দ্রুত পরিবর্তন মাপা হয়। তাই বিমানে চালকরা এই যন্ত্র ব্যবহার করেন।
১৯. গ্রীষ্ম এবং শীতের ক্ষেত্রে কোনও ডায়াগ্রাম্যাটিক পার্থক্য আছে?
উঃ- গ্রীষ্মকালে স্থলভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চচাপ থাকবে, শীতকালে স্থলভাগে উচ্চচাপ ও জলভাগে নিম্নচাপ বিরাজ করবে।
২০. বায়ুপ্রবাহ (Wind low) কাকে বলে?
উঃ- উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বায়ু ধাকিত হলে তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে।
২১. বায়ুপ্রবাহের কারণ কী?
উঃ-
- তাপ ও চাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ। যেখানে চাপ বেশি সেখান থেকে যেদিকে বায়ুর চাপ কম,বায়ু সেই দিকেই যায়।
- উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হলে বায়ুর ঘনত্ব ও আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে যায়, ফলে বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে।
- জলীয় বা্প বিশুদ্ধ বায়ুর চেয়ে হালকা বলে, বেশি পরিমাণে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করলে বায়ুও হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়।
২২. বায়ুর গতিপ্রবাহ দিক নির্ণয়কারী যন্ত্রের নাম কী?
উঃ- বায়ু ঘূর্ণি বা বাত পতাকা (Wind Vane) যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর গতিপথ বা প্রবাহপথ নির্ণয় করা হয়।
২৩. বায়ুর গতিবেগ নির্ণয়কারী যন্ত্রের নাম কী?
উঃ- আ্যানিমােমিটার (Anemometer) যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর গতিবেগ নির্ণয় করা যায়।
২৪. বায়ুর গতিবেগ কোন একক (Unit) পরিমাপ করা হয়?
উঃ- বায়ু গতিবেগ নটু (Knot)-এ প্রকাশ করা হয়। (১ নট = ৬০৮০ feet = ১ নটিক্যাল মাইল)। (১ mile = ১.৬০৯৩৪৪ km)।
২৫. আর্দ্রবায়ু কাকে বলে?
উঃ- যখন বায়ুর মধ্যে বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তখন সেই বায়ুকে আর্দ্রবায়ু বলে।
২৬. সম্পূক্ত বায়ু (Saturated Wind) কাকে বলে?
উঃ- উষ্ণতা নির্দিষ্ট থাকলে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বাতাস যখন সর্বোচ্চ পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে, তখন সেই বাতাসকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে।
২৭. আর্দ্রতা কোন যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়?
উঃ- হাইগ্রোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়।
২৮.আপেক্ষিক আর্দ্রতা কোন যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়?
উঃ- শুদ্ক ও আর্দ্রকুল্ড-যুক্ত হাইগ্রোমিটার (Dry & Wet Bulb Thermometer)-এর সাহায্যে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার মাপ করা হয়।
২৯. মেঘ (Cloud) কী?
উঃ- বাতাসে ভাসমান ছােট ছােট জলকণা বা তুষারকণাকে মেঘ বলে।
৩০. উচ্চতা-অনুসারে মেঘ কয়প্রকার ও কী কী?
উঃ- তিন প্রকার যথা
(i] উঁচু (High cloud), [ii] মাঝারি (Medium cloud), [iii] নিচু (Low cloud)।
৩১. উঁচু মেঘ কাকে বলে?
উঃ- ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬১৫০-১২,৩০০ মিটারের মধ্যবর্তী উচ্চতায় বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখা যায় তাকে উঁচু মেঘ বলে। এই মেঘে বৃষ্টিপাত হয় না। উদাহরণ: [a] সিরাস, (b] সিরাে-কিউমুলাস, [c] সিরাে স্ট্যাটাস।
৩২. মাঝারি মেঘ কাকে বলে?
উঃ- ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪৬০ থেকে ৬১৫০ মিটারের মধ্যবর্তী বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখা যায় তাকে মাঝারি মেঘ বলে।
উদাহরণ:
[a] অন্টো-কিউমুলাস- পরিষ্কার আবহাওয়া সূচনা করে।
[b] অন্টো-স্ট্র্যাটাস- খারাপ আবহাওয়া ও প্রবল বৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়।
৩৩. নিচু মেঘ কাকে বলে?
উঃ- ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৪৬০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমন্ডলে যে মেঘ দেখতে পাওয়া যায় তাকে নিচু মেঘ বলে।
উদাহরণ:
[a] স্ট্যাটো-কিউমুলাস- প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।
[b] স্ট্যাটাস-আকাশকে চাদরের মতাে ঢেকে রাখে।
নিম্বোে স্ট্রাটাস- গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত বা তুবারপাত হয়।
৩৪. কোন মেঘ থেকে অধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ- কিউমুলাে-নিম্বাস মেঘে অধিক বৃষ্টিপাত হয়।
৩৫. অধঃক্ষেপণের সংজ্ঞা দাও?
উঃ- বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা ও তুযারকণায় পরিণত হলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত,শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি রূপে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়, এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে অধঃক্ষেপণ (Precipi-tation) বলে।
৩৬. বৃষ্টিপাত (Rainfall) কাকে বলে?
উঃ- বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কমে গেলে মেঘের মধ্যস্থিত জলকণাসমূহ পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও বড় হয় এবং পৃথিবীর অভিকর্যের টানে ভূ-পৃষ্ঠের পতিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠে একসঙ্গে বহু জলকণার পতনের নামই বৃষ্টিপাত।
৩৭. সমবর্ষণ রেখা কাকে বলে?
উঃ- যেসব কাল্পনিক রেখার সাহায্যে সমান গড় বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলােকে যুক্ত করা হয় সেইসব রেখাকে সমবর্ষণ রেখা বলে।
৩৮. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয় কার সাহায্যে?
উঃ- বৃষ্টিমাপক (Rain Gauge) যন্ত্রের সাহায্যে কোনও স্থানে কতটা বৃষ্টিপাত হল তা মাপা হয়। সাধারণত সেন্টিমিটারে বৃষ্টিপাতের পরিমাপ করা হয়।
৩৯. ইংরেজিতে কালবৈশাখী ঝড়কে ‘নর্থওয়েস্টার বলে কেন?
উঃ- ছােটোনাগপুর মালভূমিতে নিম্নচাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া কালবৈশাখী ঝড় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে। ইংরেজীতে কালবৈশাখীকে ‘নর্থওয়েস্টার’ বলে। এই বায়ুপ্রবাহ বেশ ঠান্ডা, তাই কালবৈশাখীর ফলে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উষ্ণতা এক লাফে অনেকটা কমে যায়।
৪০. কালবৈশাখী (নর্থওয়েস্টার) ঝড় কাকে বলে?
উঃ- এপ্রিল -মে (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে প্রথর সূর্য কিরণে নিম্নচাপের কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় এবং পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের শীতল ও উচ্চচাপের বায়ু প্রবলবেগে ওই দিকে ধাবিত হয়। এর ফরে স্থানীয়ভাবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে বজ্য-বিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড় ওঠে। ওই ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত।
৪১. মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি চরিত্রটি কেমন?
উঃ- খামখেয়ালি চরিত্র মৌসুমি বায়ুর প্রধান চরিত্র। মৌসুমি বায়ু কখনও আগে এসে আগে ফিরে যায়, আবার কখনও পরে এসে দীর্ঘস্থায়ী হয়। ভারতে মােট বৃষ্টিপাতের ৯০% যেহেতু মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে তাই মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত যেমন অনিয়মিত তেমনি অনিশ্চিত। বিভিন্ন প্রান্তে কখনও অনাবৃষ্টি আবার কখনও অতি বৃষ্টি দেখা দেয়। অনাবৃষ্টির প্রভাবে ঘটে খরা (Drought) এবং অতি বৃধ্টিতে বন্যা (Flood) আদতে খরা ও বন্যা জলচক্লের (Hydrological Cycle) বিপরীত দুই পিঠ।
৪২. প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি (Retrenting Monsoon) বায়ু কাকে বলে?
উঃ- অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সুর্য মকরক্রাত্ীয় অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থলভাগ অপেক্ষা উত্তপ্ত হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আগত এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে পশ্চাৎ অপসারণে বাধ্য করে, এই বায়ুকে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু বলে।
৪৩. আশ্বিনের ঝড় কাকে বলে?
উঃ- অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে সুর্য লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থালভাগ অপেক্ষা অধিক উতপ্ত হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়। এই বায়ুর সঙ্গ অপেক্ষাকৃত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুর সংঘর্ষে পশ্চিমবঙ্গে যে ঘূর্ণি বাতাসের সৃষ্টি হয় তাকে আশ্বিনের ঝড় বলে।
৪৪. ভারতের কোন অঞ্চলে বছরে দু’বার বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ- ভারতের করমন্ডল বা তামিলনাড়ু উপকুল অঞ্চলে এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে বছরে দু’বার (একবার বর্ষাকালে এবং একবার শীতকালে) বৃষ্টিপাত হয় বা দু’বার বর্ষাকাল।
৪৫. ভারতের জলবায়ুর কোন বিষয়টি ‘পশ্চিমী ঝামেলা’ নামে পরিচিত?
উঃ- শীতকালে মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে পশ্চিমাবায়ু ইরান মালভূমির উপর দিয়ে বয়ে এসে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। এই পচিমাবায়ুর প্রভাবে জন্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচলপ্রদেশে তুষারপাত হয় এবং পাঞ্জাব সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। কখনও কখনও এই বায়ুপ্রবাহ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত চলে আসে। এই বায়ুপ্রবাহ আমাদের দেশে পশ্চিমী ঝামেলা (Western Disturbance) নামে পরিচিত। এই বায়ুপ্রবাহের ফলে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্লে যে হালকা বৃষ্টিপাত হয় তাতে রবিশস্য, বিশেষত গম চাষের সুবিধা হয়।
৪৬. মৌসুমি বিস্ফোরণ’ (Burst of Monsoon) কাকে বলে?
উঃ- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দ্বারা ভারতে যেখানে যখন মরশুমের প্রথম বৃষ্টিপাত হয় (বিশেষত মালাবার উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে) সেই বৃষ্টিপাতকে সেখানে বর্ষারম্ভের সূচনা বলে গণ্য করা হয়। এই বর্ষারম্ভের সূচনা যেন একটু আকস্মিকভাবেই হয়। প্রচুর মেঘের ঘনঘটা, গর্জন ও বিদ্যুতের ঝলকানিসহ প্রবল বর্ষণ, তাই বর্ষারত্তের এই সূচনাকে বলা হয় ‘মৌসুমি বায়ুর বর্ষা বিস্ফোরণ’ বা মৌসুমি বিস্ফোরণ’ (Burst of Monsoon)।
৪৭. N. L. M. বলতে কী বােঝাে?
উঃ- Normal Limit of Monsoon (NLM) যার প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সাধারণত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ২০ মে, কেরলে ২৯ মে, কলকাতায় ১০ জুন এবং দিল্লিতে। জুলাই বর্ষা আরম্ভ হয়; ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভারতের সর্বত্র বর্ষা নেমে যায়। ভারতের শতকরা ৯০ ভাগ বৃষ্টিপাত এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ুর দ্বারা সংঘটিত হয়।
৪৮. Monsoon Trough?
উঃ- দীর্ঘ নিম্নচাপকে Trough বলে। ভারতে জুন মাসে গড় উচ্চতা মােটামুটিভাবে বেশি থাকে। তাই নিম্নচাপ বিবাজ করে। গঙ্গা অববাহিকা বরাবর দীর্ঘ নিম্নচাপ বলয় (Monsoon Trough) অবস্থান করে। এই মৌসুমি বায়ু ভারতে দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়।
৪৯. মৌসুমি কথার উৎপত্তি এবং অর্থ কী?
উঃ- আরবি শব্দ মৌসিম’ বা মলয়ালম শব্দ মনাসিন থেকে মৌসুমি কথার উৎপত্তি যার অর্থ ঋতু। এই বিশেষ ঋতুতে বায়ু আসে বলে একে মৌসুমি বায়ু বলে।
নিম্বোে স্ট্রাটাস- গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত বা তুবারপাত হয়।
৩৪. কোন মেঘ থেকে অধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ- কিউমুলাে-নিম্বাস মেঘে অধিক বৃষ্টিপাত হয়।
৩৫. অধঃক্ষেপণের সংজ্ঞা দাও?
উঃ- বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা ও তুযারকণায় পরিণত হলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত,শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি রূপে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়, এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে অধঃক্ষেপণ (Precipi-tation) বলে।
৩৬. বৃষ্টিপাত (Rainfall) কাকে বলে?
উঃ- বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কমে গেলে মেঘের মধ্যস্থিত জলকণাসমূহ পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও বড় হয় এবং পৃথিবীর অভিকর্যের টানে ভূ-পৃষ্ঠের পতিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠে একসঙ্গে বহু জলকণার পতনের নামই বৃষ্টিপাত।
৩৭. সমবর্ষণ রেখা কাকে বলে?
উঃ- যেসব কাল্পনিক রেখার সাহায্যে সমান গড় বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলােকে যুক্ত করা হয় সেইসব রেখাকে সমবর্ষণ রেখা বলে।
৩৮. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয় কার সাহায্যে?
উঃ- বৃষ্টিমাপক (Rain Gauge) যন্ত্রের সাহায্যে কোনও স্থানে কতটা বৃষ্টিপাত হল তা মাপা হয়। সাধারণত সেন্টিমিটারে বৃষ্টিপাতের পরিমাপ করা হয়।
৩৯. ইংরেজিতে কালবৈশাখী ঝড়কে ‘নর্থওয়েস্টার বলে কেন?
উঃ- ছােটোনাগপুর মালভূমিতে নিম্নচাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া কালবৈশাখী ঝড় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে। ইংরেজীতে কালবৈশাখীকে ‘নর্থওয়েস্টার’ বলে। এই বায়ুপ্রবাহ বেশ ঠান্ডা, তাই কালবৈশাখীর ফলে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উষ্ণতা এক লাফে অনেকটা কমে যায়।
৪০. কালবৈশাখী (নর্থওয়েস্টার) ঝড় কাকে বলে?
উঃ- এপ্রিল -মে (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে প্রথর সূর্য কিরণে নিম্নচাপের কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় এবং পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের শীতল ও উচ্চচাপের বায়ু প্রবলবেগে ওই দিকে ধাবিত হয়। এর ফরে স্থানীয়ভাবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে বজ্য-বিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড় ওঠে। ওই ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত।
৪১. মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি চরিত্রটি কেমন?
উঃ- খামখেয়ালি চরিত্র মৌসুমি বায়ুর প্রধান চরিত্র। মৌসুমি বায়ু কখনও আগে এসে আগে ফিরে যায়, আবার কখনও পরে এসে দীর্ঘস্থায়ী হয়। ভারতে মােট বৃষ্টিপাতের ৯০% যেহেতু মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে তাই মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত যেমন অনিয়মিত তেমনি অনিশ্চিত। বিভিন্ন প্রান্তে কখনও অনাবৃষ্টি আবার কখনও অতি বৃষ্টি দেখা দেয়। অনাবৃষ্টির প্রভাবে ঘটে খরা (Drought) এবং অতি বৃধ্টিতে বন্যা (Flood) আদতে খরা ও বন্যা জলচক্লের (Hydrological Cycle) বিপরীত দুই পিঠ।
৪২. প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি (Retrenting Monsoon) বায়ু কাকে বলে?
উঃ- অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সুর্য মকরক্রাত্ীয় অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থলভাগ অপেক্ষা উত্তপ্ত হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আগত এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে পশ্চাৎ অপসারণে বাধ্য করে, এই বায়ুকে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু বলে।
৪৩. আশ্বিনের ঝড় কাকে বলে?
উঃ- অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে সুর্য লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থালভাগ অপেক্ষা অধিক উতপ্ত হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়। এই বায়ুর সঙ্গ অপেক্ষাকৃত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুর সংঘর্ষে পশ্চিমবঙ্গে যে ঘূর্ণি বাতাসের সৃষ্টি হয় তাকে আশ্বিনের ঝড় বলে।
৪৪. ভারতের কোন অঞ্চলে বছরে দু’বার বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ- ভারতের করমন্ডল বা তামিলনাড়ু উপকুল অঞ্চলে এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে বছরে দু’বার (একবার বর্ষাকালে এবং একবার শীতকালে) বৃষ্টিপাত হয় বা দু’বার বর্ষাকাল।
৪৫. ভারতের জলবায়ুর কোন বিষয়টি ‘পশ্চিমী ঝামেলা’ নামে পরিচিত?
উঃ- শীতকালে মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে পশ্চিমাবায়ু ইরান মালভূমির উপর দিয়ে বয়ে এসে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। এই পচিমাবায়ুর প্রভাবে জন্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচলপ্রদেশে তুষারপাত হয় এবং পাঞ্জাব সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। কখনও কখনও এই বায়ুপ্রবাহ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত চলে আসে। এই বায়ুপ্রবাহ আমাদের দেশে পশ্চিমী ঝামেলা (Western Disturbance) নামে পরিচিত। এই বায়ুপ্রবাহের ফলে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্লে যে হালকা বৃষ্টিপাত হয় তাতে রবিশস্য, বিশেষত গম চাষের সুবিধা হয়।
৪৬. মৌসুমি বিস্ফোরণ’ (Burst of Monsoon) কাকে বলে?
উঃ- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দ্বারা ভারতে যেখানে যখন মরশুমের প্রথম বৃষ্টিপাত হয় (বিশেষত মালাবার উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে) সেই বৃষ্টিপাতকে সেখানে বর্ষারম্ভের সূচনা বলে গণ্য করা হয়। এই বর্ষারম্ভের সূচনা যেন একটু আকস্মিকভাবেই হয়। প্রচুর মেঘের ঘনঘটা, গর্জন ও বিদ্যুতের ঝলকানিসহ প্রবল বর্ষণ, তাই বর্ষারত্তের এই সূচনাকে বলা হয় ‘মৌসুমি বায়ুর বর্ষা বিস্ফোরণ’ বা মৌসুমি বিস্ফোরণ’ (Burst of Monsoon)।
৪৭. N. L. M. বলতে কী বােঝাে?
উঃ- Normal Limit of Monsoon (NLM) যার প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সাধারণত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ২০ মে, কেরলে ২৯ মে, কলকাতায় ১০ জুন এবং দিল্লিতে। জুলাই বর্ষা আরম্ভ হয়; ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভারতের সর্বত্র বর্ষা নেমে যায়। ভারতের শতকরা ৯০ ভাগ বৃষ্টিপাত এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ুর দ্বারা সংঘটিত হয়।
৪৮. Monsoon Trough?
উঃ- দীর্ঘ নিম্নচাপকে Trough বলে। ভারতে জুন মাসে গড় উচ্চতা মােটামুটিভাবে বেশি থাকে। তাই নিম্নচাপ বিবাজ করে। গঙ্গা অববাহিকা বরাবর দীর্ঘ নিম্নচাপ বলয় (Monsoon Trough) অবস্থান করে। এই মৌসুমি বায়ু ভারতে দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়।
৪৯. মৌসুমি কথার উৎপত্তি এবং অর্থ কী?
উঃ- আরবি শব্দ মৌসিম’ বা মলয়ালম শব্দ মনাসিন থেকে মৌসুমি কথার উৎপত্তি যার অর্থ ঋতু। এই বিশেষ ঋতুতে বায়ু আসে বলে একে মৌসুমি বায়ু বলে।
0 Comments: