INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্ত:

স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্ত:


উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মপ্রচারক ছিলেন 'স্বামী বিবেকানন্দ' (১৮৬৩-১৯০২ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি ছিলেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের অত্যন্ত প্রিয় ও প্রধান শিষ্য। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তার দেওয়া নতুন আদর্শ ‘নব্য বেদান্ত’ নামে পরিচিত। স্বামীজির ধর্মভাবনা, সকল কর্মপ্রয়াস ও সাধনার মূল ভিত্তি ছিল গুরু শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শিক্ষা ও বেদান্ত বা উপনিষদের শাশ্বত বার্তা। গুরুর নির্দেশে বেদান্তকে তিনি নতুনভাবে ব্যাখ্যার দ্বারা তাকে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। ধর্মচিন্তাকে তিনি ঈশ্বর সাধনার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তাকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করেন।


নব্য বেদান্ত:
বিবেকানন্দের ধর্মীয় চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নব্য বেদান্তবাদ। প্রাচীন অদ্বৈতবাদ বা অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে বলা হয়েছে ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা অর্থাৎ, ব্ৰহ্ম ছাড়া জগতের কোন অস্তিত্ব নেই। বিবেকানন্দ প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের নিজস্ব ব্যাখ্যা দ্বারা একে জনপ্রিয় করে তোঁলেন। তিনি বলেন, সর্বত্রই যেহেতু ব্রত্মের উপস্থিতি, তাই সাধারণ মানুষের সেবা করলেই ব্রহ্মের সেবা করা হবে। তিনি ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা'র কথা বলেন। সেবাকে তিনি উপাসনায় পর্যবসিত করেন। তাঁর মতে, আনুষ্ঠানিক বা আচারকেন্দ্রিক ধর্ম হল ধর্মের গৌণরূপ। ধর্মের মুখ্যরূপ হল জীবসেবা।

বাস্তবায়িত বেদান্ত:
তিনি প্র্যাকটিক্যাল বেদান্ত বা বাস্তবায়িত বেদান্ত দ্বারা সন্ন্যাস ও সমাজের মেলবন্ধনে উদ্যোগী হন। তিনি বলেন, প্রাচীন সন্ন্যাসীরা ছিলেন মানববিমুখ, সমাজবিমুখ ও সংসারবিমুখ। তারা সমাজ থেকে বহু দূরে গিয়ে অরণ্যের নিভৃত কুটিরে বা পাহাড়ের গুহায় ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন থাকতেন। তিনি সন্ন্যাসকে অরণ্য থেকে তুলে এনে স্থাপন করেন লোকালয়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে। তাঁর নব্যবেদান্ত বা প্র্যাকটিক্যাল বেদান্তের অভিমুখ ছিল একটাই, 'আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায়চ'। অর্থাৎ, জগতের কল্যাণের মধ্যেই নিজের মোক্ষলাভ। তাই তিনি সকলকে জগতের কল্যাণে তাদের উৎসর্গ করার কথা বলেন এবং সকল জীবকে শিবজ্ঞানে সেবার কথা বলেন।

শিকাগো ধর্ম সম্মেলন:
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। সেখানে বেদান্তের মহিমা ও বিশ্বজনীনতার আদর্শ প্রচার করে ভারতের সনাতন হিন্দুধর্মকে জগৎসভায় পরিচিত করান। হিন্দুধর্মের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বহু বিদেশি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
 
        বিবেকানন্দ তার ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা সনাতন হিন্দুধর্মকে সঠিক পথে চালিত করেন। ফলে বহু মানুষ হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়। সমগ্র বিশ্বে মানবকল্যাণের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, গুরুর আদর্শ ও বাণী বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ' রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন'।

0 Comments: