INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

সমাজ সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান:

সমাজ সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান:


উনিশ শতকে বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি ছিলেন একজন বাস্তববাদী সমাজ সংস্কারক। নারীশিক্ষা প্রসার তথা নারীমুক্তি আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী।


সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগর:
বিধবা বিবাহ:
হিন্দু-সমাজে অবহেলিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত নারী সমাজের মুক্তির জন্য বিদ্যাসাগর আজীবন লড়াই করেন। সে যুগে হিন্দু সমাজে বাল্য বিবাহের চল ছিল। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা সমাজের ভয়ে তাদের কমবয়সি মেয়েদের বয়স্ক লোকেদের সঙ্গে বিবাহ দিতেন। তাই অনেক সময় অল্প বয়সেই এই সমস্ত মেয়েরা বিধবা হত। এর ফলে তাদের দুর্দশার শেষ থাকত না। নারীজাতির এই করুণ অবস্থা তাঁকে ব্যথিত করে। হিন্দু শাস্ত্র ও পরাশর সংহিতা' অধ্যয়ন করে বাল্যবিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে জনমত গঠনের কাজে তিনি মন দেন। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার বিদ্যাসাগরের পক্ষে দাঁড়ায় এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ১৫ নং বিধি দ্বারা বিধবা বিবাহ আইন বলবৎ করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় নিজের পুত্র নারায়ণের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে অষ্টাদশী এক বিধবার বিবাহ দেন। এরকম তিনি ৬০টি বিবাহ দেন।

বাল্যবিবাহ:
হিন্দুধর্মে মেয়েদের বাল্যবিবাহ নামক সামাজিক ব্যাধি দূর করার জন্য তিনি নিরলস সংগ্রাম করেন। তিনি ‘সর্ব শুভকরী’ পত্রিকায় 'বাল্য বিবাহের দোষ’ শীর্ষক নিবন্ধ প্রকাশ করে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন। এ ব্যাপারে তিনি সফলও হন। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সরকার আইন করে মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে ১০ বছর ধার্য করে।

বহুবিবাহ:
সে যুগে হিন্দুসমাজে পুরুষের বহু বিবাহ করার অধিকার ছিল। ফলে কুলিন সমাজে এই প্রথার বহুল প্রচলন ছিল।বিদ্যাসাগর এই প্রথার বিরুদ্ধে সরব হন এবং এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার নামক একটি পুস্তিকাও রচনা করেন। এ ছাড়া তিনি সরকারি সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু বহুবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ সাফল্য পাননি।

অন্যান্য পদক্ষেপ:
এ ছাড়া বিদ্যাসাগর মহাশয় সে যুগের কৌলিন্য প্রথা, গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন প্রথা, জাতিভেদ প্রথা ও কুষ্ঠরোগী হত্যা প্রভৃতি নানাবিধ প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তাঁর উদ্যোগেই খ্যাতনামা চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার বৈদ্যনাথ রাজকুমারী কুষ্ঠাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।

      উনিশ শতকে বাংলার অচলায়তন সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার যে-সাহসিকতা তিনি দেখিয়েছেন তা অভূতপূর্ব। সেই কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নির্ভীক সমাজ সংস্কারক সম্পর্কে বলেছেন, এই ভীরুর দেশে তিনিই একমাত্র পুরুষ সিংহ। ড. অমলেশ ত্রিপাঠির মতে তিনি ছিলেন একজন ‘ট্রাডিশনাল মর্ডানাইজার’। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন এমন এক মানুষ—'যার মনীষা প্রাচীন ঋষির মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজের মতো এবং হৃদয়বত্তা বঙ্গজননীর মতো।'

0 Comments: