INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

বহুমুখী নদী পরিকল্পনা: বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য: (Multipurpose River Planning).

বহুমুখী নদী পরিকল্পনা: বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য: (Multipurpose River Planning).


বহুমুখী নদী পরিকল্পনা:

যে পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে বা ঊর্ধ্বপ্রবাহে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সমগ্র নদী উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মাছ চাষ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি বহুবিধ উদ্দেশ্য সাধিত হয় এবং নদী উপত্যকা অঞ্চলের সার্বিক কল্যাণ রূপায়িত হয়, তাকে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা বলে।
যেমন— ভারতে দামোদর, শতদ্রু, মহানদী, কৃষ্ণা, গোদাবরী প্রভৃতি নদীর ওপর বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।

বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য:
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি হল—

জলসেচের প্রসার: নদীর নিম্ন ও উচ্চ অববাহিকার অধিক পরিমাণ কৃষি জমিতে জলসেচের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নদীর উপর বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করা হয়ে থাকে। এর ফলে কৃষি জমি গুলিতে প্রয়োজন মতো জল সেচ করা সম্ভব হয় বলে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ: কোন কোন বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে নিন্ম অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। বর্ষার অতিরিক্ত জলকে জলাধার নির্মাণের মাধ্যমে ধরে রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।

জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: এইরকম বহুমুখী নদী পরিকল্পনায় বাঁধের সঞ্চিত জলকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যা উক্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও শিল্পের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।

জলের সরবরাহ: বহুমুখী নদী পরিকল্পনা জলাধারে সঞ্চিত জলকে অনেক সময় পার্শ্ববর্তী জনবসতি ও শহরগুলি তে সরবরাহের মাধ্যমে জলের চাহিদা পূরণ করা হয়।

মৎস্য সংগ্রহ: বাঁধের সঞ্চিত সঞ্চিত জলে মৎস্য শিকারের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হয়।

জলপথের বিকাশ: বহুমুখী পরিকল্পনায় অনেক সময় জলপথ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হয়।

পর্যটন শিল্পের বিকাশ: বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কে কেন্দ্র করে অনেক সময় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটতে দেখা যায়।

শিল্পের বিকাশ: অনুকূল জলবায়ু ও পরিবেশ যুক্ত অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প বিকাশের প্রয়োজনীয়তা সস্তা জলবিদ্যুৎ, স্বচ্ছ জল, উন্নত জলপথ ও প্রচুর পরিমাণে কৃষি জাতীয় কাঁচামালের যোগান শিল্পের বিকাশে যথেষ্ট সাহায্য করে।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: এই পরিকল্পনাগুলি কে কেন্দ্র করে প্রচুর পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
যেমন - প্রকল্পটির বাস্তবায়ন, কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি, শিল্পের বিকাশ প্রভৃতি জন্য প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

বহুমুখী নদী পরিকল্পনার কুফল বা সমস্যা: বহুমুখী নদী পরিকল্পনা যেহেতু একটি মাঝারি আকৃতির পরিকল্পনা যা একটি, দুটি বা তিনটি রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই ধরনের বহুমুখী পরিকল্পনা উক্ত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকে নানা রূপ বিপরীত মুখী প্রভাব ফেলে থাকে।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার নিম্নলিখিত কুফল বা অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়।
অরণ্য ও বন্য প্রাণীর বিলোপ: বহুমুখী নদী পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য অনেক সময় নদী অববাহিকা অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ অরণ্য চ্ছেদন করা। ফলে একদিকে যেমন অরণ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, অন্যদিকে বাসস্থানের অভাবে অনেক বন্য প্রাণী চির তরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

নদীর নিম্ন অববাহিকায় জলের পরিমাণ হ্রাস: জলাধার বা বাঁধ গুলি সাধারণত নদীর উপরের দিকে গড়ে তোলা হয় বলে, নদীর নিম্ন অংশে জলের পরিমাণ হ্রাস পায়, নদী তার ক্ষয় করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ও নদী ক্রমশ তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।

জলজ প্রাণীর উপর প্রভাব: বাঁধের নিচের অংশে তেমন জলপ্রবাহ থাকে না বলে, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী রা জলের সঙ্গে বাহিত পুষ্টি মৌল পায় না। ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বহুমুখী পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলেও অনেক সময় এই পরিকল্পনার জন্যই নদীর নিম্ন ও ঊর্ধ্ব অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যেমন- বর্ষা কালে বৃষ্টির অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে না পেরে বাঁধ গুলি থেকে প্রচুর পরিমাণ ছেড়ে দেওয়ার ফলে নিম্ন অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবার বাঁধের উপরের অংশে সঞ্চিত জলের ফলে ঊর্ধ্ব অববাহিকার বেশ কিছু অংশ প্লাবিত হয়ে থাকে।

ভূমিকম্পের সম্ভাবনা: অনেক সময় জলাধারে সঞ্চিত জলরাশির প্রচণ্ড চাপে বাঁধের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে।
যেমন- ১৯৬৭ সালে মহারাষ্ট্রের কয়না জলাধারের চাপে কয়ণা অঞ্চলে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

বাস্তু ত্যাগ ও পূনর্বাসন মূলক সমস্যা: এই ধরনের বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বে নদীর নিম্ন অংশে বসবাসকারী মানুষদের সরানো হয়, ফলে বিপুল পরিমাণ মানুষের বাস্তু ত্যাগ ঘটে এবং পরবর্তী কালে এই সব মানুষদের পূনর্বাসন মূলক নানা রূপ সমস্যার সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিবাদ: বহুমুখী পরিকল্পনা গুলি যেহেতু অনেক সময় দুই তিনটি রাজ্যের সম্মিলিত প্রয়াসে গড়ে ওঠে, তাই এই রাজ্য গুলির মধ্যে পরিকল্পনা রূপায়ণের ব্যয়, জলের পরিমাণ প্রভৃতি নানা দিক নিয়ে বিবাদের সূচনা হয়।

ভারতের  কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী নদী পরিকল্পনার নাম:
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা:
এটি ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা।১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি উপত্যকা পরিকল্পনার অনুকরণে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খন্ডে দামোদর নদের উপর এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গড়ে ওঠে।

ভাকরা নাঙ্গাল পরিকল্পনা:
হিমাচল প্রদেশের শতদ্রু নদীর উপর এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনা অবস্থিত। এটি ভারতের উচ্চতম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা।

হিরাকুদ পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি উড়িষ্যায় মহানদীর উপর অবস্থিত।এটি ভারতের দীর্ঘতম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা।

চম্বল পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি রাজস্থান রাজ্যে যমুনা নদীর উপনদী চম্বল নদীর উপর নির্মিত হয়েছে।

তেহরি বাঁধ পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ভাগীরথী নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে।

নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা:
তেলেঙ্গানা রাজ্যে কৃষ্ণা নদীর উপর এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি অবস্থিত।

কোশি পরিকল্পনা:
ভারত ও নেপালের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি বিহারে কোশি নদীর উপর অবস্থিত।

তুঙ্গভদ্রা পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি কর্নাটকে তুঙ্গভদ্রা নদীর উপর অবস্থিত।

তেইন বাঁধ পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি পাঞ্জাবে রাভী নদীর উপর অবস্থিত।
ফারাক্কা পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত। এটি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়।

নাপথা ঝাকরি পরিকল্পনা:
হিমাচল প্রদেশে শতদ্রু নদীর উপর এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি অবস্থিত।

মেত্তুর বাঁধ পরিকল্পনা:
এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনাটি তামিলনাড়ুতে কাবেরী নদীর উপর অবস্থিত।

0 Comments: