বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সম্পর্কে আলোচনা কর?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রিঃ) ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স'। নামের সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশন বসে। এখানে কংগ্রেস সভাপতি মতিলাল নেহরুকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানানোর উদ্দেশ্যে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রেরণায় ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে একটি স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠিত হয়। এর নাম হয় 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' বা সংক্ষেপে ‘বি ভি’। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর প্রধান নির্দেশক বা GOC ছিলেন। সুভাষচন্দ্র এবং প্রধান পরিচালক ছিলেন সত্য গুপ্ত। সত্য গুপ্ত সারা বাংলা ঘুরে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স'-কে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার বিভিন্ন স্থানে এর শাখা গড়ে ওঠে।

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য: এই দলের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন সত্য গুপ্ত, গণেশ ঘােষ, অনন্ত সিং, লােকনাথ বল, সূর্য সেন, বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, সুরেন্দ্রমােহন ঘােষ প্রমুখ।

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের কার্যাবলি: 

এই গােষ্ঠীর কার্যাবলি নিম্নরূপ –
অভিবাদন প্রদর্শন: এই গােষ্ঠীর সদস্যরা কলকাতায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের সভাপতি মতিলাল নেহরুকে অভিবাদন জানায়।

অপারেশন ফ্রিডম: এই গােষ্ঠী ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দিদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদ জানায় এবং এই উদ্দেশ্যে ‘অপারেশন ফ্রিডম’ চালু করে।

সােম্যান হত্যা: এই দলের সদস্য বিনয় বসু বাংলা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল সোম্যানকে হত্যা করেন (২৯ আগস্ট, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে)।

অলিন্দ যুদ্ধ: বি ভি দলের অন্যতম সদস্য বিনয়কৃষ্ণ বসু, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৮ ডিসেম্বর বি ভি দলের তিন তরুণ বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ এক দুঃসাহসিক অভিযান চালান। তাঁরা কারাবিভাগের কুখ্যাত ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট ওই তিন বিপ্লবীর ওপর আক্রমণ চালালে তাঁদের অভিযান ব্যর্থ হয়।

গান্ধিজি বি ভি দলের কার্যকলাপকে কলকাতার 'পার্ক সার্কাসের সার্কাস’ বলে অভিহিত করলেও তা ছিল বাংলার সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে আত্মত্যাগের এক স্মরণীয় দৃষ্টান্ত।