
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম উইলিয়াম প্রাশিয়ার সিংহাসনে বসেন। সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী উইলিয়াম প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্যসাধনে পক্ষপাতী ছিলেন। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে অটো ভন বিসমার্ক নামে এক ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করলে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে এক নবযুগের সূচনা হয়।
বিসমার্কের রাষ্ট্র দর্শন:১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রান্ডেনবার্গের এক জমিদার পরিবারে বিসমার্কের জন্ম। কাভুরের ন্যায় তিনিও ছিলেন রাজতন্ত্রের ঘোরতর সমর্থক। তিনি রাজতন্ত্রের অধীনে প্রাশিয়ার নেতৃত্বেই জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষপাতী ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি যুদ্ধনীতি গ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন। তিনি তার ‘রক্ত ও লৌহ' [Blood & Iron] নীতির দ্বারা তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ [১৮৬৪ খ্রিঃ]:
প্রাশিয়া ও ডেনমার্কের সীমান্তে স্লেজভিগ ও হলস্টেন নামে দুটি অঞ্চল ডেনমার্কের অধীনে ছিল। বিসমার্ক এই দুটি রাজ্য পাওয়ার আশায় অস্ট্রিয়াকে পক্ষে টেনে ২৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধে ডেনমার্ক পরাজিত হয় এবং গ্যাস্টিনের সন্ধিতে স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধির শর্ত অনুযায়ী হলস্টেনের শাসনভার দেওয়া হল অস্ট্রিয়াকে এবং স্লেজভিগে প্রাশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ [১৮৬৬ খ্রিঃ]:
কূটনীতির যাদুকর বিসমার্ক প্রথম থেকেই জানতেন যে, জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন করতে হলে অস্ট্রিয়ার কিছু অঞ্চল ছিনিয়ে আনা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে বিসমার্ক গোপনে রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইটালিকে পক্ষে এনে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্যাডোয়ার যুদ্ধে অস্ট্রিয়া চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। প্রাগের সন্ধির মাধ্যমে মেইন নদীর উত্তর অংশের সমস্ত অঞ্চলে প্রাশিয়ার কর্তৃত্বকে অস্ট্রিয়া স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ [১৮৭০ খিঃ]:
বিসমার্ক ভালভাবে জানতেন যে, দক্ষিণ জার্মানির ফরাসি প্রভাবাধীন অঞ্চলগুলিকে ফ্রান্সের কবলমুক্ত করতে না পারলে জার্মানির ঐক্যকরণ সম্ভব নয়। এজন্য ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য। স্পেনের সিংহাসনের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রাশিয়া ও ফ্রান্সের বিরোধের সূত্রপাত হয়। বিসমার্ক তার কূটনীতির সাহায্যে ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নকে প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য করেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সঙ্গে প্রাশিয়ার সেডানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে তৃতীয় নেপোলিয়ন চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্টের সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী দক্ষিণ জার্মানির রাজ্যগুলি প্রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। ফ্রান্স এই সংযুক্তি মেনে নেয়।
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ভার্সাই শহরে প্রাশিয়ার রাজা উইলিয়ম ‘জার্মান সম্রাট’ উপাধি গ্রহণ করে জার্মানির সিংহাসনে আরোহণ করেন। এভাবে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন হয় এবং অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
0 Comments: