
স্বাভাবিক উদ্ভিদ কাকে বলে?
মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো অঞ্চলে জলবায়ু, মৃত্তিকা ও ভূপ্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা উদ্ভিদ হল স্বাভাবিক উদ্ভিদ।ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ:
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য।
- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য।
- ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ।
- পার্বত্য উদ্ভিদ।
- ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য:
উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড় ও পার্বত্য অঞ্চল, আন্দামান ও নিকোবর এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমে ঢাল, গড় বৃষ্টি ২০০ সেমির অধিক এবং উয়তা ২৫°- ২৭° সেলসিয়াস হওয়ায় চিরসবুজ অরণ্য গড়ে উঠেছে। রোজউড, আয়রন উড, মেহগনি হল প্রধান উদ্ভিদ।
ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য:
যেখানে গড় বৃষ্টি ৫০ - ২০০ সেমি এবং বৃষ্টি একটি ঋতুভিত্তিক সেখানে পাতাঝরা উদ্ভিদের প্রাধান্য বেশি। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এই উদ্ভিদ দেখা যায়। পর্ণমোচী উদ্ভিদ দু-প্রকার-
- আর্দ্র পর্ণমোচী: যেখানে বৃষ্টি ১০০ - ২০০ সেমি সেখানে শাল, সেগুন, চন্দন প্রভৃতি বৃক্ষ দেখা যায়।
- শুষ্ক পর্ণমোচী: যেখানে গড় বৃষ্টি ৫০ - ১০০ সেমি সেখানে কুল, পলাশ সমেত বিভিন্ন ঘাস জন্মায়।
ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ:
রাজস্থান (থর), গুজরাট ও পাঞ্জাবে যেখানে গড় বৃষ্টি ২৫ সেমির কম সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বাবলা প্রভৃতি জেরোফাইট বা জাঙ্গল জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
পার্বত্য অরণ্য:
হিমালয় অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধিতে যেহেতু দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে তাই বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন উদ্ভিদমণ্ডলী গড়ে উঠেছে।
যেমন- (a) চিরহরিৎ অরণ্য (গর্জন, শিশু), (b) পাইন অরণ্য, (c) মিশ্র অরণ্য (দেবদারু, ম্যাপল), (d) সরলবর্গীয় অরণ্য (ফার, স্পুস), (e) আল্পীয় অরণ্য (রডোডেনড্রন)।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য:
উপকূলের সূক্ষ্ম পলিমৃত্তিকা অঞ্চল, যেখানে জোয়ারভাটা খেলে সেখানে গড়ে ওঠা বিশেষ উদ্ভিদ হল ম্যানগ্রোভ। ভারতের সুন্দরবন, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী বদ্বীপে এই অরণ্য গড়ে উঠেছে। সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া প্রধান উদ্ভিদ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদে শ্বাসমূল, ঠেসমূল, জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায়।
অরণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি:
- অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ।
- বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।
- পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ।
- দাবানল প্রতিরোধ।
- বনসৃজন ও পুনর্বনসৃজন প্রভৃতি পদ্ধতির মাধ্যমে অরণ্য সংরক্ষণ করা যায়।
সামাজিক বনসৃজন:
- চাহিদা অনুযায়ী বনভূমি রোপণ ও আদি বনভূমি সংরক্ষণ।
- পতিত জমির ব্যবহার।
- ফল ও জ্বালানি সংগ্রহ।
- পশুখাদ্যের জোগান প্রভৃতি উদ্দেশ্যে জনগণের সহায়তায় গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে বনভূমি স্থাপন ও সংরক্ষণ হল সামাজিক বনসৃজন।
কৃষি বনসৃজন:
কৃষক তার নিজের জমিতে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পশুখাদ্য, ফলমূল প্রভৃতি অতিরিক্ত দ্রব্য উৎপাদন এবং কৃষকের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বনভূমি স্থাপন হল কৃষি বনসৃজন।
0 Comments: