কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত মণ্ডলতত্ত্বের গুরুত্ব আলোচনা করো। (mandala theory).


প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, রাষ্ট্রতত্ত্ব তথা পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মণ্ডলতত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি আদর্শ রাষ্ট্রের বিদেশনীতি কীরূপ হওয়া উচিত, তার এক যুগোপযোগী আলোচনা এই তত্ত্বে স্থান পেয়েছে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণ: প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ, বহিঃশত্রুর আক্রমণের মোকাবিলা করা অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণে মণ্ডলতত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ঐক্য ও শান্তিরক্ষা: কৌটিল্য বিজিগীষু রাজাকে কেন্দ্র করে মোট ১২ জন রাজার সমবায়ে রাজমণ্ডল গড়ে তুলেছেন। তিনি মনে করেছিলেন যে, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ঐক্য, শান্তি ও সুস্থিতি বজায় থাকবে। 

শত্রু-মিত্র নির্ধারণ: দ্বাদশ মণ্ডলের ১২টি রাজ্যের মধ্যে কাকে কীভাবে গ্রহণ করতে হবে, তার সঠিক বিশ্লেষণ মণ্ডলতত্ত্বে আলোচিত হয়েছে। এভাবে প্রকৃত শত্রু ও মিত্র নির্ধারণ করে বিজিগীষু রাজা সকলপ্রকার আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হবেন বলে  অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে। 

ক্ষমতার ভারসাম্য তত্ত্ব: মণ্ডলতত্ত্বে প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বিজিগীষু রাজ্যের রাজার Balance of Power বা ক্ষমতার ভারসাম্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। 

বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিকতা: প্রাচীন ভারতে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মণ্ডলতত্ত্বের গুরুত্ব বর্তমান যুগেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে কৌটিল্য আন্তঃরাজ্য সম্পর্ক পরিচালনার যে নির্দেশ লিপিবদ্ধ করেছেন, তা বর্তমান যুগের পররাষ্ট্রনীতিকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। 

পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীন ভারতের মণ্ডলতত্ত্ব সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক হলেও রাষ্ট্রজোট ও পারস্পরিক সম্পর্কের কথা বলে। তাই বর্তমান কালেও এর সমান প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ