হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার সম্পর্ক (Relation between the Harappan Civilisation with the Aryan Civilisation):


সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক যুগের কী সম্পর্ক ছিল, তা বলা কঠিন। অনেকেই মনে করেন আর্যরা সিন্ধু সভ্যতার নির্মাণকর্তা। বিষয়টি বিতর্কিত। কিন্তু উভয় সভ্যতার মধ্যে তফাৎ এত বেশি যে, দুটি সভ্যতা একই জাতি সৃষ্টি করেছিল বলে মনে হয় না। স্যার জন মার্শাল মনে করেন দুটি সভ্যতা পৃথক। অধিকাংশ পণ্ডিতই তাঁর মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। বস্তুত, উভয় সভ্যতার মধ্যে মিলের চেয়ে অমিল বেশি। যেমন – 


প্রথমতঃ সিন্ধু সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োতে আবিষ্কৃত দ্বিতল পাকাবাড়ি, স্নানাগার, শস্যাগার, উন্নত পয়ঃপ্রণালী নাগরিক জীবনের সাক্ষ্য বহন করে। অপরদিকে বৈদিক আর্যরা ছিল যাযাবর জাতি। তারা নগরনির্মাণকারী অপেক্ষা নগর ধ্বংসকারী হিসাবে চিত্রিত হয়েছে তাদের নিজেদের রচিত স্তোত্রগুলিতে। 


দ্বিতীয়তঃ সিন্ধু সভ্যতায় লোহার প্রচলন ছিল না। এটি ছিল তাম্রপ্রস্তর যুগের সভ্যতা। লোহা তখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু বৈদিক যুগে লোহার ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তারা লোহা দিয়ে নির্মাণ করত। 


তৃতীয়তঃ লোহার মত ঘোড়াও সিন্ধুবাসীদের কছে অজ্ঞাত ছিল বলে মনে করা হয়। হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা ঘোড়ার সাথে পরিচিত ছিল কিনা বা পরিচিত থাকলেও ঘোড়াকে কাজে লাগাত কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না। তবে আর্যদের কাছে ঘোড়া ছিল একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় জন্তু। তারা ঘোড়ায় চেপে যুদ্ধ করত ও ঘোড়ায় টানা রথে চড়ত। 


চতুর্থতঃ হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃপূজা ও লিঙ্গ পূজার ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু আর্যদের মধ্যে মাতৃপুজার প্রচলন ছিল না ও তারা লিঙ্গ পূজাকে ঘৃণার চোখে দেখত। 


পঞ্চমতঃ হরপ্পা সভ্যতায় সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃকেন্দ্রিক কিন্তু বৈদিক শাসনব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক। হরপ্পাসভ্যতার অধিবাসীরা মৃতদেহকে সমাধিস্থ করত, কিন্তু বৈদিক সভ্যতার অধিবাসীরা মৃতদেহকে আগুনে ভস্মীভূত করত। 


ষষ্ঠতঃ সিন্ধুবাসীরা লিখন পদ্ধতি আয়ত্ত করেছিল। অবশ্য আজও পর্যন্ত তার পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে আর্যরা জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হলেও তারা লিখন পদ্ধতির প্রচলন ঘটাতে পারেনি। 


সপ্তমতঃ আর্যরা ছিল যুদ্ধপ্রিয় জাতি। তারা ঘোড়ায় চেপে উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধ করত। অপরদিকে সিন্ধু বাসীরা ছিল শান্তিপ্রিয়। 


অষ্টমতঃ উভয় সভ্যতার আমলে মানুষদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। সিন্ধুর অধিবাসীরা মাছ খেত, তাছাড়া শূকর, ছাগল ভক্ষণ করত, কিন্তু আর্যরা মাছ খেত না ও গরু, ঘোড়া প্রভৃতির মাংস খেত।

0 মন্তব্যসমূহ