
বাংলা তথা ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে যে সমস্ত গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক তার মধ্যে ছিল অন্যতম। নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের শাসন, শোষণ, নিপীড়ন, অত্যাচার-লাঞ্ছনার মর্মন্তুদ চিত্র গ্রন্থটিতে ফুটে উঠেছে।
নীলদর্পণের প্রকাশকাল:১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘কস্যাচিৎ পথিকস্য’ ছদ্মনামে তিনি নাটকটি লেখেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। পাদ্রী রেভারেন্ড জেমস লঙ-এর নামে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
নীলকরদের শোষণ:
এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়—
- বাংলার নীলচাষীদের কীভাবে নীলকর সাহেবরা নীলচাষে বাধ্য করত।
- নীলচাষের জন্য চাষিদের অগ্রিম বা ‘দাদন’ নিতে বাধ্য করত।
- নীল কেনার সময় ওজন বেশি, দাম কম দিয়ে ঠকাত।
নীল চাষীদের ওপর অত্যাচার:
এই নাটকে তুলে ধরা হয় অনিচ্ছুক চাষিদের ওপর নীলকরদের অমানুষিক অত্যাচারের কথা। অনিচ্ছুক চাষিদের ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও আগুন দেওয়া হত, গোরু-বাছুর, ছাগল, হাঁস, মুরগি কেড়ে নেওয়া চাষিদের মারধর শিশু ও মহিলাদের আটকে রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হত—এসব ঘটনার কথা জানা যায়। অভিযোগ জানিয়েও পুলিশ, প্রশাসন, আইন, আদালতের কোনো সাহায্য চাষিরা পেত না।
নীল চাষীদের প্রতিবাদী আন্দোলন:
অতঃপর অত্যাচারিত, শোষিত কৃষক অহিংস উপায়ে সংঘবদ্ধ হয়। তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে সরকার পঞ্চম ও সপ্তম আইন দ্বারা নীলচাষ চাষিদের ইচ্ছাধীন করেন। ফলে তারা নীলচাষ করতে অস্বীকার করে।
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভূমিকা:
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীলদর্পণ নাটকটি - প্রকাশিত হলে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে ইংরেজ-বিরোধী - মানসিকতা তৈরি হয় এবং তারা চাষিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। ইংরেজিতে অনুবাদের ফলে দেশ-বিদেশে নীলকরদের অত্যাচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে।
নীলদর্পণ সমসাময়িক বাংলা সাহিত্য ও সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। নাটকের তৎকালীন সাধারণ মানুষের জীবনকথা যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অনেকেই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসেবে স্বীকার করেন। নীলদর্পণ প্রথম বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কথা বলে মানুষের মনে জাতীয়তাবাদের সঞ্চার করেছিল।
0 Comments: